অনৈতিক সুবিধা অর্জনে থোক বরাদ্দের টাকা ব্যয় করছেন এমপিরা

tib

নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়নের জন্য প্রতিবছর পাঁচ কোটি টাকার যে থোক বরাদ্দ থাকে, সংসদ সদস্যরা সেই অর্থ স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতার চর্চা, নির্বাচনে ভোট নিশ্চিত করার চেষ্টা ও অনৈতিক সুবিধা অর্জনের পথ হিসেবে ব্যবহৃত করছেন বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

প্রতিষ্ঠানটির মতে এই প্রকল্পের কার্যকর তদারকি, প্রকল্পের সার্বিক মূল্যায়ন, এবং সংসদ সদস্যের সততা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট আচরণ বিধির অনুপস্থিতি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণকে আরও উৎসাহিত করছে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে।

আজ বুধবার (১২ আগস্ট) প্রকাশিত ‘অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের পথ হিসেবে সংসদীয় আসনভিত্তিক থোক বরাদ্দ: অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণপত্রে এসব কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি। এই ধরনের গবেষণাপত্র অন্যান্য সময় সংবাদ সম্মেলন করে জানাানো হলেও এবার করোনার কারণে এই গবেষণাপত্রটি সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণার তথ্য সংগ্রহ; ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ৫০টি নির্বাচনী এলাকায় এই গবেষণা চালানো হয়।

গবেষণাপত্রে বিশেষজ্ঞদের মত নিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের ইচ্ছানুযায়ী কাজ নির্বাচন ও বাস্তবায়ন হওয়ার কারণে স্কিমের সম্ভাব্যতা যাচাই, কারিগরি ও আর্থিক বিশ্লেষণের সুযোগের অনুপস্থিতি বিদ্যমান এবং বাস্তবায়নের সময় অর্থ অপচয়ের ঝুঁকিসহ কাজের স্থায়িত্বশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে পল্লী এলাকার উন্নয়নের জন্য এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রতিবেদনও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এবং মাঠ পর্যায়ে দুইটি প্রকল্পের কিছু স্কিমের সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে স্কিম বাস্তবায়নের কাজে চ্যালেঞ্জ ও অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। তবে আইএমইডি ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত কোনো প্রকল্পেরই পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করেনি।

এছাড়া প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, জবাবদিহিতার অভাব, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থার অকার্যকরতা, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, মানসম্মত সামগ্রী ব্যবহার না করা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও সদিচ্ছার ঘাটতি, অন্যের লাইসেন্স ব্যবহার, ট্যাক্স ফাঁকি, আঞ্চলিক গোষ্ঠীর প্রভাব, কার্যাদেশ বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, বাস্তবায়িত স্কিমের নিম্বমান এই প্রকল্পের সমস্যা হবে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা অনুযায়ী, কোনো কোনো এলাকায় সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীদের কাছে বছরে ২০-২৫ শতাংশ কাজ বিক্রি (অবৈধভাবে সাব-কন্ট্রাক্ট) হয় কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক নথিতে সাব-কন্ট্রাক্টের কোনো প্রমাণ রাখা হয় না। তদারকি প্রতিষ্ঠানও এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন। বাস্তবে তারা দরপত্রপ্রাপ্ত প্রকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মাঠ পর্যায়ের যেকোনো পরামর্শ বা পর্যবেক্ষণ অবহিত করেন এবং তাদের নামে বিল দেওয়া হয়।

আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ঠিকাদার অর্থের বিনিময়ে নিম্নমানের কাজ করে লাভবান হন এবং বাস্তবায়নকারী ও তদারকি কর্তৃপক্ষ নিয়ম-বহির্ভূত আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে কাজের অনুমোদন দেন এবং জনপ্রতিনিধি, দলীয় ব্যক্তি ক্ষমতার প্রভাব ও আর্থিক লাভ বজায় রাখেন। বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধাপে নির্দিষ্ট হারে কমিশন বাণিজ্য, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজি মূলত অংশীজনদের মধ্যে পারস্পরিক সুবিধার সমঝোতা সম্পর্কের প্রতিফলন।

সিটি করপোরেশন এলাকা সংশ্লিষ্ট ১৬টি আসন ছাড়া ২৮৪টি সংসদীয় আসনের এমপিরা প্রতিবছর এলাকার উন্নয়ন কাজের জন্য পাঁচ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ পেয়ে থাকেন।