আর বাকি ৭ দিন : পাঁচ সুইং স্টেটে এগিয়ে বাইডেন, দুটিতে ট্রাম্প

কে হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট? দেশটির খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ অধ্যাপক অ্যালেন লিখটম্যান জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর পূর্বাভাস। এবার তিনি বলছেন, প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন। ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটির এই ইতিহাসের অধ্যাপক ১৯৮৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের ফল কী হবে, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন! ২০০০ সালের নির্বাচন বাদে সব নির্বাচনেই ফল একেবারে সঠিক হয়েছে। যদিও ওই বছরের নির্বাচনের ফল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নির্ধারিত হয়েছিল। ডেমোক্র্যাট আল গোর হেরেছিলেন রিপাবলিকান জর্জ বুশের কাছে। অ্যালেন লিখটম্যানের এই বিশ্লেষণ ভোটারদের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি স্টেটে একসঙ্গে ভোট হলেও মূলত সবারই নজর থাকে ব্যাটলগ্রাউন্ড খ্যাত কয়েকটি স্টেটের দিকে। এগুলোকে বলা হয় সুইং স্টেট। এবার আটটি স্টেট নির্বাচনী ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সাউথ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমান।

রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের ওপর ভিত্তি করে আমেরিকার স্টেটগুলো মূলত রেড ও ব্লু—এই দুই ভাগে বিভক্ত। এই দুই ধরনের বাইরে আরো কিছু স্টেট রয়েছে, যেগুলো নির্বাচনের সময় সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিতি পায়। এসব স্টেটের ভোটার মূলত দুই দলেরই প্রায় সমানে সমান। অনেক সময় প্রার্থী ও অন্যান্য কারণে এসব স্টেটের ভোটাররা নিজেদের সমর্থন দিয়ে থাকেন।

বিভিন্ন বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এবার যে আটটি স্টেটকে সুইং বলা হচ্ছে সেগুলো হলো ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া, ওহাইও, মিশিগান, উইসকনসিন, আইওয়া, আরিজোনা ও নর্থ ক্যারোলাইনা। এই আট সুইং স্টেটে রয়েছে মোট ১২৫টি ইলেকটোরাল ভোট। স্টেটগুলোর মধ্যে পাঁচটিতে সুস্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন। দুটিতে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান ভালো। তবে ফ্লোরিডায় দুই প্রার্থী অনেকটা সমানে সমান লড়ছেন। ফ্লোরিডায় ইলেকটোরাল কলেজের ভোট ২৯টি। নির্বাচনে যা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনে বাইডেনের অবস্থা বেশ ভালো। ওহাইও ও আইওয়াতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন ট্রাম্প। এই স্টেটগুলোর বাইরে জর্জিয়া ও মিনেসোটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি একটি জরিপে লালদুর্গ বলে পরিচিত টেক্সাসে জো বাইডেনের এগিয়ে থাকাও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১০০ বছরে কোনো রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে এই ফ্লোরিডায় জয়লাভ ছাড়া প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব হয়নি। ২০১৬ সালে তিনি ১ পয়েন্টের বেশি ব্যবধানে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়েছিলেন। ফলে এবারের নির্বাচনেও ফ্লোরিডায় জয় পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ট্রাম্প। এই স্টেটে ট্রাম্পের নিশ্চিত জয় দেখছেন বাংলাদেশি আমেরিকান রিপাবলিকান ককাসের চেয়ারম্যান ওয়াসি চৌধুরী। তিনি বলেন, ট্রাম্প ফ্লোরিডার ভোটার। এরই মধ্যে সেখানে ভোটও দিয়েছেন। যার প্রভাব পড়বে ভোটারদের মধ্যে। তা ছাড়া বেশির ভাগ সুইং স্টেটে ট্রাম্পের জয় দেখছেন তিনি।

যদিও দ্বিমত পোষণ করে বাংলাদেশিজ ফর বাইডেনের ন্যাশনাল কমিটির ইয়ুথ কো-অর্ডিনেটর আহনাফ আলম বলেন, যদি কোনো কারণে ফ্লোরিডা না পাওয়াও যায়, তবুও বিরাট জয় পাবেন বাইডেন। বরং তিনি এবার রেড স্টেট বলে পরিচিত টেক্সাসেও বাইডেন জয়ী হবেন বলে মনে করেন। তিনি মনে করেন, পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন নিশ্চিতভাবে জয় পাবেন বাইডেন। এই স্টেটগুলোর ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা যথাক্রমে ২০, ১৬ ও ১০টি।

ডালাস মর্নিং নিউজ ও ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের জরিপ অনুযায়ী, টেক্সাসে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে বাইডেন। ধারণা করা হচ্ছে, হিস্পানিকদের ভোটে এগিয়ে গেছেন বাইডেন। ১৯৭৬ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের পর সেখানে আর কোনো ডেমোক্র্যাট জয় পাননি।

বিশ্লেষক কাজি সাহিদ হাসান মনে করেন, দুই প্রার্থীরই জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার লড়াইটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। তবে তাঁর মতে, ট্রাম্প বিজয়ী হলে অল্প ব্যবধানে হবেন। বাইডেন জিতলে সেটা হবে বিরাট ব্যবধানে।

সাউথ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শফিকুর রহমান অবশ্য মনে করেন, এবার জো বাইডেনই জয়ী হবেন। আর তাঁর জন্য যে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের প্রয়োজন হয়, সেখানে তিনি মনে করেন বাইডেন পাবেন ৩০৭ থেকে ৩১০টি।