জায়েদকে এবার আজীবন বয়কটের হুঁশিয়ারি

অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে অভিনেতা, প্রযোজক ও শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিল চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠন। এছাড়া সমিতি থেকে তার সদস্যপদও সাময়িক বাতিল করা হয়। জায়েদের সঙ্গে বয়কটের ঘোষণা দেয়া হয় খল অভিনেতা মিশা সওদাগরের বিরুদ্ধেও।

সেই জায়েদেরই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক আদেশের মাধ্যমে ১৮ সংগঠনের অন্যতম সংগঠন প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির ২০১৯-২০২১ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল করে একজন উপসচিবকে প্রশাসকের দায়িত্বে বসিয়েছে। তিনি আগামী ১২০ দিনের মধ্যে সংগঠনের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনাসহ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।

শুধু তাই নয়, যে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের জন্য জায়েদ খানকে চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি থেকে তার সদস্যপদ সাময়িক বাতিল করে, সে সবেরও কোনো সত্যতা নেই বলে আরেকটি চিঠিতে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যার কারণে জায়েদের কাজে ফেরার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা নিষেধ নেই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষেপেছেন ১৮ সংগঠনের নেতারা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম খোকনের দাবি, ‘যে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নতুন কমিটি ভেঙে দেয়া হয়েছে, সে অভিযোগ সত্যি নয়। জানি না বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিল। বিষয়টি নিয়ে আমরা বসব। একটা সিদ্ধান্তও নেব।’

খোকন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যেভাবে বিষয়টি ধরেছে, প্রযোজক সমিতির গঠনতন্ত্রে সেভাবে নেই। গঠনতন্ত্রে আছে, টানা ছয় বছর ক্ষমতায় থাকার পর সপ্তম বছরে যে নির্বাচন হবে, সে নির্বাচনে সভাপতি-সেক্রেটারি পদে রার্নিং সভাপতি-সেক্রেটারি অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু প্রযোজক সমিতিতে টানা ছয় বছর কেউ ক্ষমতায় থাকেনি। ছয় মাস বা নির্বাচনের আগে মামলা করে কমিটি বাতিল করার পর নির্বাচন হয়েছে। এটাকে টানা ক্ষমতায় থাকা বলে না।’

পাশাপাশি জায়েদ খানকে কাজের অনুমতি দেয়ার আদেশেরও কড়া সমালোচনা করেন পরিচালক খোকন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্ত ধোপে টিকবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। হুঁশিয়ারি দিয়ে খোকন বলেন, ‘জায়েদকে বয়কট করেছি আমরা ১৮ সংগঠন। প্রযোজক সমিতির কমিটি না থাকলেও বাকি ১৭ সংগঠন আগের সিদ্ধান্তে অটল থাকবে। বরং জায়েদ বিষয়টি বেশ নোংরা করে ফেলেছে। সে এবার আজীবনের জন্য বয়কট হবে।’

জায়েদ সিনেমার তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন বলেও উল্লেখ করেন খোকন। তার কথায়, ‘জায়েদের পারিশ্রমিক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার। এই পারিশ্রমিকেও তাকে কেউ নিতে চায় না। তাই সে নিজের টাকায় সিনেমা নির্মাণ করে। তার জন্য সিনেমার এত বড় ক্ষতি হতে পারে না। সে তার ক্ষমতা জাহির করছে, করুক। এই ক্ষমতা দিয়ে সিনেমা করা যাবে না। সিনেমা করতে হলে সিনেমার মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে। এটা ক্ষমতা দেখানোর জায়গা না।’

এদিকে, প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তের বিপরীতে আপিল করার কথা জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, ‘কমিটি বাতিলের বিষয়টি আমরা সবে জেনেছি। আমরা আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আপিল করব।’

প্রসঙ্গত, অনিয়মের অভিযোগে চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠন মিলে অভিনেতা জায়েদ খানকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে উল্টো প্রযোজক পরিবেশক সমিতির বিরুদ্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানান। সেখানে তিনি সমিতির ২০১৯-২০২১ মেয়াদি নির্বাচনের অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দুটি বেআইনিভাবে দখল করে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

জায়েদের সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবকে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। তদন্ত শেষে সোমবার এক অফিস আদেশে জানানো হয়, হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে প্রার্থী হয়ে প্রযোজক সমিতির সভাপতি পদে খোরশেদ আলম খসরু ও সাধারণ সম্পাদক পদে সামসুল আলম নির্বাচিত হয়েছেন। সেখানে কমিটি বিলুপ্তের আদেশ দেয়া হয়। আরেক আদেশে কাজে ফেরার অনুমতি পান জায়েদ খান।