ঢাকা আজ শীর্ষ দূষিত বায়ুর শহর

  • উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষিত

বাতাসের মান ২৮৪ নিয়ে দূষিত শহরের শীর্ষে উঠে এসেছে ঢাকা। অন্যদিকে বাতাসের মান ২৫০ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি।

আজ শনিবার বেলা ৪টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় আইকিউ এয়ারের ওয়েবসাইটে দেখা যায় এসব তথ্য।

এ সময় দেখা যায় বাতাসের মান ২২৯ নিয়ে পাকিস্তানের লাহোর তৃতীয় ও ১৮৭ নিয়ে চতুর্থ স্থানে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা।

বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় পাঁচ নম্বরে ভারতের মুম্বাই, ছয় নম্বরে রয়েছে মঙ্গোলিয়ার উলানবাটর।

তালিকার সাত নম্বরে রয়েছে কিরগিজস্তানের বিসকেক, ইউক্রেনের কিয়েভ রয়েছে আট নম্বরে ও বিশ্বের নয় নম্বর দূষিত শহর হলো কুয়েত সিটি। আর বিশ্বের ১০ নম্বর দূষিত শহর ক্রোয়েশিয়ার জাগরেব।

রাজধানী ঢাকার বায়ু দূষণের পেছনে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও ইটভাটার কয়লা পোড়ানোকে প্রধানত দায়ী করা হয়। রাস্তাঘাট সঠিকভাবে পরিচ্ছন্ন না করার কারণকেও রাজধানীর বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়।

উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষিত

বায়ুদূষণ নিরসনে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি উচ্চ আদালত নির্দেশানমূলক রায় দেন। এরপর নানা সময় এ রায় কার্যকর নিয়ে তদারকিমূলক বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়। উচ্চ আদালত যাদের কারণে রাজধানীতে বায়ুদূষণ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সপ্তাহে দুইবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ঢাকার যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ চলছে সেসব এলাকা (কাজের স্থান) ঘেরাও করে কাজ করার পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উন্নয়ন ও সংস্কারকাজের কারণে ধুলাবালিপ্রবণ এলাকায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দিনে দুইবার পানি ছিটাতে ঢাকার দুই সিটি মেয়র ও নির্বাহীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

উন্নয়নকাজের এলাকায় প্রয়োজনে দুই বেলা পানি ছিটানোর কথা থাকলেও বিআরটি প্রকল্পের ১৩ কিলোমিটার এলাকা সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, এলাকাবাসী কখনো পানি ছিটাতে দেখেননি।

বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের অধীনে স্বতন্ত্র লেন তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজের কারণে সৃষ্ট ধুলাবালিতে ওই এলাকার জনজীবন অতিষ্ঠ।

টঙ্গী এলাকার সড়কের পাশের দোকানি সামিউল আলম বলেন, ‘আমি কখনো পানি ছিটাতে দেখিনি।’

বোর্ডবাজারের বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের মালিক মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘ধুলা আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মহাসড়কের পাশের দোকানপাট, ব্যবসাকেন্দ্র, ঘরবাড়ির অবস্থা খুবই শোচনীয়। কয়েক মিনিটেই দোকানে ধুলার স্তর পড়ে যায়। দোকানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। প্রায় দুই বছর ধরে এ অবস্থা চললেও গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে বিপজ্জনক মাত্রায় উড়ছে ধুলা।’

ছয়দানা মালেকের বাড়ি এলাকার কাপড়ের দোকান আবরণী স্টোরের মালিক আবদুল হাবিব বেপারী বলেন, ‘ধুলায় ব্যবসা লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে। ইট, খোয়া ও বালু মেশানো ধুলা জমে তিন-চার দিনেই কাপড়ের রং নষ্ট হয়ে যায়। কাপড় বিক্রির অযোগ্য হয়ে পড়ছে।’

বোর্ডবাজারের কলমেশ্বর এলাকার বাসিন্দা একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বণিক বলছিলেন, ধুলার কারণে মহাসড়ক, এমনকি আধা কিলোমিটারের মধ্যে মাস্ক না পরে চলাচল করা দুঃসাধ্য। শরীরে ধুলার স্তর পড়ে যায়। নাক দিয়ে ঢুকে হাঁচি-কাশি দেখা দেয়। ঘরেও ধুলা চলে আসে। বিছানা, তরিতরকারি, রান্না করা খাবার ধুলায় নষ্ট হয়।’

ঢাকা-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী ঢাকা পরিবহনের চালক আমির হোসেন বলেন, ‘গাড়ির গতি বাড়লে ধুলা ওড়ার গতিও বাড়ে। এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অনেক সময় দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালাতে হয়। যাত্রীরা তো ধুলায় মাখামাখি হয়ই, গাড়িও নষ্ট হয়।’