পৌরসভায় আ’লীগের ফরম বিক্রির শর্ত শিথিল

a.lig-logo

পৌরসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে এসে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির শর্ত শিথিল করেছে আওয়ামী লীগ।

তৃণমূলের তালিকায় নাম না থাকলেও কেন্দ্রীয় ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ নেতাদের সুপারিশে এখন থেকে দলীয় ফরম সংগ্রহ করতে পারছেন ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

এ ছাড়া তৃণমূলের ভোটের রেজুলেশনের প্রার্থীতালিকা তৈরিতে ভোটাভুটির শর্তও শিথিল করেছে দলটি। ফলে তৃণমূলে ভোটাভুটি না করে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক ত্যাগী, সৎ, যোগ্য ও পরীক্ষিত সব নেতাকর্মীর নাম জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠানো যাচ্ছে।

ফলে তৃণমূলের তালিকায় যাদের নাম নেই-এমন দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এবার ধরনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ নেতাদের কাছে। তাদের সুপারিশে সংগ্রহ করছেন দলীয় মনোনয়ন ফরম। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, মনোনয়ন

উন্মুক্ত করা হয়েছে-বিষয়টি এমন নয়। মনোনয়নের জন্য আমাদের তৃণমূল যে তালিকা পাঠায়, তার বাইরে যদি কেউ দলীয় মনোনয়ন নিতে আগ্রহী থাকে তাহলে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের সুপারিশ থাকতে হবে। কিংবা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সিনিয়র নেতাদের সুপারিশ থাকতে হবে। তা হলে তৃণমূলের পাঠানো তালিকার বাইরে থাকা আগ্রহী নেতারা মনোনয়ন ফরম নিতে পারছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই না ত্যাগী, যোগ্য ও পরীক্ষিত কোনো নেতা বঞ্চিত হন। সবাই সুযোগ পাক। এ জন্যই এ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। যাতে কেউ প্রভাব বিস্তার করে শুধু নিজের লোকদের নাম পাঠাতে না পারে। কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতাদের সুপারিশে মনোনয়ন ফরম ক্রয় করা নেতাদের বিষয়ে মনোনয়ন বোর্ডসভায় আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগের এ নেতা।

সারা দেশের দুই শতাধিক পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন থেকে ইতোমধ্যে দুই ধাপে ৮৬টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের ২৫ পৌরসভার জন্য আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।

দ্বিতীয় দফার ৬১টি পৌরসভার নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ফরম বিক্রি শুরু করেছে দলটি। প্রথমদিনেই ৮৭টি ফরম বিক্রি করে দলটি।

এবার দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রিতে প্রথম ধাপে কিছুটা ‘কড়াকড়ি’ ছিল আওয়ামী লীগে। সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা/পৌরসভা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত রেজুলেশনে প্রস্তাবিত প্রার্থীর বাইরে অন্য কারও কাছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেনি দলটি।

কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযারী প্রতিটি পৌরসভায় তিনজন বা তার অধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর নামের তালিকা তৃণমূল থেকে রেজুলেশন আকারে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। নির্দেশনা মেনে কেন্দ্রে পাঠানো প্রায় প্রতিটি পৌরসভার তালিকায় চার বা তার অধিক প্রার্থীর নাম ছিল।

সেই তালিকা দেখেই ফরম বিক্রি করা হয়েছিল। প্রথম ধাপে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতেও ‘কঠোর’ অবস্থানে দেখা গেছে দলটিকে। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় তৃণমূলে পাঠানো তালিকায় কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা ছিল। যেমন একটি পৌরসভায় আগে বিদ্রোহী হয়ে জিতেছিলেন এমন একজনকে একমাত্র প্রার্থী করে কেন্দ্রে নাম পাঠানো হয়েছিল।

সেখানে আরও কেউ মনোনয়ন ফরম কিনতে না পারায় প্রথমে তাকে মনোনয়ন দেয়া হলেও পরে তার পরিবর্তে আরেকজনকে দলের প্রার্থী করা হয়। এরপর প্রথম ধাপেই আরও দুই জায়গায় দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন করেছিল আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু জায়গায় যোগ্য নেতাদের নাম না পাঠানোর অভিযোগ ছিল।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেজুলেশনে প্রস্তাবিত প্রার্থীর বাইরেও অনেক পৌরসভায় আওয়ামী লীগের আরও যোগ্য দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু তালিকায় নাম না থাকায় তারা দলীয় ফরম কিনতে পারেননি। আবার অনেক জায়গায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে শুধু নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নাম পাঠিয়েছে।

এ বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগও জমা পড়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। ফলে অনেক প্রার্থী দলীয় ফরম কেনার সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছিল।

সূত্র জানায়, পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনির্ধারিত বৈঠক করেন দলটির কেন্দ্রীয় এবং বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ওই বৈঠকে উঠে আসে আসন্ন পৌর নির্বাচন সামনে রেখে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

বিশেষ করে তৃণমূল সংগঠনের রেজুলেশনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম দিতে টাকার বাণিজ্য, এমপিদের ইন্ধনে অজনপ্রিয় প্রার্থীর নাম পাঠানো, জেলা-উপজেলা-পৌর আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা, তৃণমূলের সিনিয়র নেতারা সিন্ডিকেট করে প্রার্থী বাছাই করার বিষয়গুলো আলোচনা হয়।

এ ছাড়া বঞ্চিত অনেক নেতাই বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে মৌখিক/লিখিত অভিযোগ করেছে বলেও বৈঠকে উঠে আসে। বঞ্চিতদের অভিযোগ, নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে মন্ত্রী-এমপি এবং তৃণমূলের সিনিয়র নেতারা নিজ নিজ সিন্ডিকেটের বাইরে যাচ্ছে না।

তারা সুকৌশলে পিছিয়ে রাখছেন তৃণমূলের নিবেদিতপ্রাণ পরীক্ষিত নেতাদের। একইসঙ্গে প্রথম ধাপের নির্বাচনের বিদ্রোহী দাঁড়ানোর কারণগুলোও চিহ্নিত করা হয় বলে বৈঠকে থাকা একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সে কারণেই তৃণমূল সংগঠনের রেজুলেশনে নাম না থাকা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য শর্ত কিছুটা শিথিল করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন ফরম বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের এ বিষয়ে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত মেনে তারা মনোনয়ন ফরম বিক্রিও শুরু করেছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা দেখেছি কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রভাবশালী পক্ষ নিজেদের বলয়ের বাইরে কোনো প্রার্থীর নাম পাঠাতে চায় না।

কিন্তু আমরা চাই, তৃণমূলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা সবাই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনার সুযোগ পাক। সে জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তারা মনোনয়ন ফরম ওঠানোর পর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ দু’পক্ষে দু’জনের নাম কেন্দ্রে পাঠায়। সে অনুযায়ী দল থেকে তাদের কাছে ফরম বিক্রি করা হয়।

ফরম বিক্রি শিথিল করায় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সুপারিশে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মোহনগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কামরুজ্জামান, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কুদ্দুস আজাদের মেয়ে তাহমিনা পারভীন বীথি ও মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজুয়ান আলী খান আর্ণিক ও মোহনগঞ্জ উপজেলার দফতর সম্পাদক মো. এমদাদুল ইসলাম খোকন।

জানতে চাইলে মোহনগঞ্জ উপজেলার দফতর সম্পাদক মো. এমদাদুল ইসলাম খোকন বলেন, দলের মনোনয়ন ফরম বিতরণে শিথিলতা করায় আমরা সুযোগ পেয়েছি। আমরা রাজনীতি করি প্রার্থী হওয়ার অধিকার যেমন আছে, তেমনি কেন্দ্র থেকে বিতরণকৃত মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ থেকে বঞ্চিত হতে পারি না। নেত্রী আমাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন।

বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলের সুপারিশে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। বাকিটা নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা সেটাই মেনে কাজ করব।