সব সময় মাশরাফিকে চান মাহমুদ

তিনি নিজেই নিজের বোলিং গতি নিয়ে কৌতুক করেন। অথচ আজকের মুস্তাফিজুর রহমানের বয়সে মাশরাফি বিন মর্তুজার গায়ে ফাস্ট বোলারের স্টিকার ছিল। শুধু গতিই তো নয়, ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’কে খেলতে বুকের ধুকপুকানি টের পাওয়া যেত বিদেশি ব্যাটসম্যানদেরও। অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। অবশ্য মাশরাফির ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পরতে পরতেই তো অবিশ্বাস। এই যেমন চলমান বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে গত পরশু ৩৫ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। দলের ভেতরে অবশ্য বিস্ময় নেই। জেমকন খুলনার কোচ মিজানুর রহমান যেমন বিশ্বাস করেন, ‘মাশরাফি ইজ মাশরাফি’। আর অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহর সাফ কথা, ‘আমি ম্যাশকে যেকোনো দিন, যেকোনো সময়ে আমার দলে চাইব।’

তবে মাশরাফি বিন মর্তুজা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ফিরছেন? মাহমুদ উল্লাহ তো বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলেরও অধিনায়ক! না, সে রকম ওলটপালট কিছু এখনো ঘটেনি। ক্রিকেটের এই ফরম্যাট থেকে মাশরাফি অবসর নিয়েছেন বছর দুই আগে। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপটা তিনি মূলত খেলছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজের আগে নিজের সামর্থ্যের জানান দিতেই হয়তো। ‘হয়তো’ বলারও বিশেষ কারণ আছে। ক্যারিয়ারের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এত দূর আসা মাশরাফির এখনকার লড়াইটা একেবারেই নিজস্ব—নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার। ‘ক্রিকেটটাই জীবনভর খেলেছি। মন দিয়ে খেলেছি। কতটা কী পেরেছি, জানি না। তবে চেষ্টা করে গেছি নিজের সেরাটা দিয়ে। যত দিন মন চায় খেলে যাব’, পঁয়ত্রিশ পেরিয়ে পরিণত মাশরাফির এটা শুধু ক্রিকেটই নয়, জীবনদর্শনও।

মাশরাফি ভাইয়ের ওপর আমার সব সময়ই বিশ্বাস এবং আস্থা আছে। উনার অভিজ্ঞতা, গেম সেন্স এবং সবচেয়ে জরুরি উনার ম্যাচ রিডিংয়ের সামর্থ্য। আমি ম্যাশকে যেকোনো দিন, যেকোনো সময়ে আমার দলে চাইব।

মাহমুদ উল্লাহ

অধিনায়ক, জেমকন খুলনা

এর পরও জনমনের বিস্ময় কি আর উবে যায়! একদা ব্যাটসম্যানের হেলমেট ফাটিয়ে ফেলা মাশরাফি গতি হারিয়েছেন অনেক দিন। ঘরের মাঠে স্পিডোমিটার ১২০ কিলোমিটারও ছোঁয় ক্বচিৎ-কদাচিত। এমন পেস বোলারকে তো তুলাধোনা করে ফেলার কথা ব্যাটসম্যানের, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। সেটিই করতে গেছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। তাঁর গতি বদল আর কাটারে কাটা পড়েছেন টুর্নামেন্টজুড়ে দাপট দেখানো গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের পাঁচ ব্যাটসম্যান।

কাটার বললে একালে সবার চোখে ভেসে ওঠে মুস্তাফিজুর রহমান। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘কোর গ্রুপ’ খুব ভালো করে জানে যে উইকেটে বল ‘গ্রিপ’ করলে মাশরাফির কাটার আরো বেশি ধন্দে ফেলে দেয় ব্যাটসম্যানদের। আরেকটি জায়গায় ‘ফিজ’ থেকে এগিয়ে মাশরাফি— অ্যাকুরেসি। মাশরাফির এ গুণটা অবিশ্বাস্য। প্রায় সাড়ে আট মাস ক্রিকেট থেকে দূরে অথচ তিনটি প্র্যাকটিস সেশন করে মাঠে নেমে একের পর এক বল ফেলে গেছেন নির্দিষ্ট একটা স্পটে। এ জন্যই ফিটনেস, প্রস্তুতি নিয়ে প্রবল সংশয় থাকা সত্ত্বেও মাশরাফির নাম ওঠে নিলামে। সে নিলামে জয়ী মিজানুর রহমান উচ্ছ্বসিত, ‘মাশরাফিকে নিয়ে বলার কিছু নাই। এত দিন পর এসে এ রকম পারফরম্যান্স, ৫ উইকেট নেওয়া…তাও ক্যারিয়ারের শেষ বেলায়…।’ পড়ন্ত বেলায় দাঁড়িয়েও মাশরাফির সাফল্য রহস্য খুলনা কোচের অজানা নয়, ‘এই উইকেটে গতিবৈচিত্র্য সাফল্যের চাবিকাঠি। মাশরাফি আরো অভিজ্ঞ। নতুন বলেও সে ন্যাচারালি গতি বৈচিত্র্য ঘটাতে পারে। লেগ কাটার, অফ কাটার মারতে পারে।’

তবে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে বিপ টেস্ট দেননি মাশরাফি। তাই তাঁকে রাখাও হয়নি বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের প্লেয়ার্স ড্রাফটে। কিন্তু দুটি দলের অধিনায়ক তখনই মনস্থির করে রেখেছিলেন, ফিট ঘোষিত হলেই মাশরাফির জন্য ঝাঁপাবেন তাঁরা। পরে সে রেসে যোগ হয় আরো দুটি দল। সেই লটারিতে জয়ী মাহমুদ উল্লাহর আনন্দ তাই আরো বেশি, ‘মাশরাফি ভাইয়ের ওপর আমার সব সময়ই বিশ্বাস এবং আস্থা আছে। উনার অভিজ্ঞতা, গেম সেন্স এবং সবচেয়ে জরুরি উনার ম্যাচ রিডিংয়ের সামর্থ্য।’

তা ছাড়া মাশরাফি বিন মর্তুজা তো সব সময়ই অক্সিজেনের আধার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অনূর্ধ্ব-১৯ কিংবা সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে তাঁর উচ্ছল সন্ধ্যার ক্লিপগুলোয় ফুটে ওঠে মাঠের বাইরেও ‘মাশরাফি ইজ মাশরাফি’!