আমি যদি আত্মহত্যা করি তাহলে হিশাম দায়ী : তমা

সম্প্রতি হানিমুনের পর দেশে ফিরে স্বামী কানাডা প্রবাসী ব্যবসায়ী হিশাম চিশতীর সঙ্গে সম্পর্কটা একদমই ভালো যাচ্ছে না চিত্রনায়িকা তমা মির্জার। টানাপোড়েন নিয়ে পাল্লাপাল্টি মামলাও করেছেন তারা। গত ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডা থানায় মামলা করেন হিশাম। মামলায় তমা মির্জা ছাড়াও তার পরিবারের কয়েকজনকে আসামি করেন। হিশামের মামলার একদিন আগে মামলা করেন তমা। মামলার পরপরই কানাডা চলে যান হিশাম।

এবার বিষয়টি নিয়ে সরাসরি ফেসবুক লাইভে কথা বললেন তমা। শনিবার রাত ১০টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন তিনি। প্রায় চল্লিশ মিনিটের লাইভের শেষদিকে তমা আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর তার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন হিশাম চিশতী, সেটাও দাবি করেছেন।

তমা বলেন, ‘কানাডার টরেন্টো শহরে প্রায় ৫০ হাজার রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী আছে। যারা বছরে দুই/তিনটি বাড়ি বিক্রি করতে পারেন। হিশামও তাদের মধ্যে একজন। তাই তাকে বিগশট যারা ভাবছেন, সে তা নয়। তারপর কথা এসেছে, তিনি কানাডাতে সাংস্কৃতিক শো স্পন্সর করেন। ২০০-৫০০ ডলার দিয়েই এসব স্পন্সর হয়। আমি আসলে তার স্পন্সরের চেয়ে তিন চারগুণ সম্মানী পাই। হিশামের সঙ্গে পরিচয় আমাদের দুজনেরই এক কমন বন্ধুর মাধ্যমে। প্রথমেই তাকে আমি অত্যন্ত ভদ্র ছেলে হিসেবে জেনেছি। তার কনভেন্সিং পাওয়ার খুবই বেশি; যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে আমি তাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেই।
এই চিত্রনায়িকা বলেন, হিশাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপহার, কুকুরের খাবারের বিষয়ে যেসব কথা বলেছেন তা খুবই হীনমানসিকতার। তিনি আরো বলেন, ‘স্ত্রী বা স্বামী হিসেবে কে কাকে কী গিফট করছেন, তা বলাটাও খুব ছোটলোকি বিষয়। সে বলেছে আমাকে নাকি ২০ লাখ ধার দিয়েছে। এত টাকা দিলে তো প্রমাণ থাকে, হয়তো অ্যাকাউন্টে দেবে। বা আমার অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এগুলো প্রমাণ দিক। একটা প্রমাণ দিলেই হবে। সে আমাকে নাকি নিয়ে ঘুরতে গেছে! মূলত আমার সঙ্গে সে যেত। সম্প্রতি আমি শো স্টপার হিসেবে বিদেশে গিয়েছি। আমার স্বামী ফ্রি লোডে গেছে। যা অর্গানাইজারদের কাছে খোঁজ নিলেও জানতে পারবেন।’

ডিভোর্সের প্রসঙ্গে তমা কাগজ দেখিয়ে বলেন, সে নাকি ডিভোর্স চেয়েছে, আমি নাকি তা দিইনি। অথচ গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর আমি ডিভোর্স ফাইল করি। এটা বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে। সে কিন্তু ডিভোর্স ফাইল করেননি। আমি সেখানে উল্লেখ করেছি, কী কী কারণে আমি এটা করতে চাইছি। আমার শাশুড়ি খুব ভালো মানুষ। তিনি মারা গেছেন। কিডনি রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন, তিনি আর বেশি দিন বাঁচবেন না। তিনি চলাফেরা করতে পারতেন না। হুইলচেয়ারে করে সেই মানুষ আমার বাসা এসে বলেন, ‘আমি বেঁচে থাকতে এটা দেখতে পারব না যে, তমা আমার ছেলেকে ডিভোর্স দিয়েছে। যেহেতু আমি মৃত্যু পথযাত্রী, তমা তুমি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ডিভোর্সটা তুলে নাও। সবকিছু মিলিয়ে আমি ডিসেম্বরে ২৫ বা ২৬ তারিখে সেটা তুলে নিই।

হিশাম প্রায়ই মারামারি করতেন জানিয়ে তমা বলেন, ‘হিশামের মারামারি করার ঘটনা নতুন নয়। তার আইনজীবীর চেম্বারেও সেটা করেছেন। সেই সময়ের ভিডিও ফুটেজ আমি সাইবার ক্রাইম ইউনিটে জমা দিয়েছি। সে ফুটেজে স্পষ্ট আছে কীভাবে সে সিনক্রিয়েট করেছে, মারামারি করেছ। এর আগেও সে আমার গায়ে হাত তুলেছে, প্রচণ্ড মারধর করেছে। তার নামে সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম। তখন আমাকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। সেখান থেকে বাসায় এনে আমাকে আটকে রাখে হিশাম। এরপর যখন থানায় যাই, তখনও আমার ঠোঁট ফোলা ও মুখে মারের দাগ ছিল। আমার মনে হয়েছে, হয়তো কমবেশি সব নারীই আক্রান্ত হন। তখন আশেপাশের অনেকেই মেয়ের দোষ খোঁজেন।’

তমা বলেন, মামলায় সে বলেছে আমি তাকে হত্যা করতে চেয়েছি। তার বন্ধুরা আমাকে বলেছে সে জাস্ট ৫ মিনিটের জন্য আমার সাথে কথা বলতে চায়। যেদিন রাতে সে আমাদের বাসায় আসে, তার বন্ধুর ফোন, ভাইয়ের ফোনের রেকর্ডিং আমার কাছে আছে। তারা বলেছিলেন, হিশাম তোমার সঙ্গে ৫ মিনিট কথা বলতে চায়। কারণ পরের দিন আমাদের মিউচুয়াল ডিভোর্স হবে। যখন সে বাসায় আসল, তখন রাত ৩টা বাজে। এসেই সে দুর্ব্যবহার করা শুরু করে। সে আমার ফোন নিয়ে নেয়। বলে, সে আমার ফেসবুক থেকে স্ট্যাটাস দেবে। সে লিখেছে, ‘আমি তমা মির্জা, আমি পরকীয়া করি। আমার স্বামী আমাকে হাতেনাতে ধরেছে’- এগুলো।

আমি বললাম, কী সমস্যা বলো! তার পকেটের মধ্যে ৩০-৪০টা ঘুমের ওষুধ। মদের গন্ধও আসছে। তার সঙ্গে দারোয়ান ছিল। আমি তাকে গিয়ে বললাম, হিশামের অবস্থা তো ভালো না। বাসায় ফোন দিন। এখানে একটা কথা বলি, আমার ফোন কিন্তু তখন আমি পাইনি। সেটা পুলিশ তার পকেট থেকে উদ্ধার করে। আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশ ডেকে আনি। পুলিশ তাকে বাসা থেকে বের করতে পারেনি। তাদের সামনেই আমাদের গালিগালাজ করতে থাকে, নানাজনকে ফোন দেওয়ার কথা বলে ভয় দেখাতে থাকে।

পুলিশ তখন বলে, ম্যাডাম আপনি থানায় ডায়েরি বা মামলা করুন। তারা তখন ব্যবস্থা নেবে। হিশাম তখন আমার ঘরে গিয়ে একা একাই দরজা আটকে দেয়। আমি আমার মা-বাবাকে নিয়ে লিফটের সামনে আসি, থানায় যাব বলে। তখন হিশাম বের হয়ে আসে। সে আমার মা-বাবার সামনে আমাকে মারধর করে। তাদের বয়স ৬৫ বছরের আশেপাশে। বাবা-মা দুজনই রোগী। তাদের সামনেই আমাকে মারতে থাকে। আমার বাবার চোখের নিচে চশমা ভেঙে ঢুকে যায়। আম্মুর কোমরে ফ্র্যাকচারও হয়। আমি মনে করি, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এবার তার ব্যান্ডেজ নিয়ে কথা বলি। তার হাতে ব্যান্ডেজ, কপালে ব্যান্ডেজ। সে বলেছে, আমার ৬৫ বছরের বাবা নাকি তার গলায় ফাঁস দিয়েছে। একজন গুরুতর রোগীর পক্ষে এটা আদৌ সম্ভব?’

লাইভের শেষদিকে কেঁদে দিয়ে তমা বলেন, ‘এরপর যদি হিশাম আমার আর কোনো ব্যক্তিগত ছবি বা বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করে বা প্রকাশ করে তাহলে আমি যদি আত্মহত্যা করি তার জন্য হিশাম দায়ী থাকবে। হিশাম ফেসবুকে আমাকে নিয়ে নোংরা পোস্ট দিত। সে আমার কাছে এসবের জন্য মাফও চেয়েছে। বলেছে, আর কখনও আমাকে নিয়ে বাজে পোস্ট করবে না।’ উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ মে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক হিশাম চিশতিকে বিয়ে করেন তমা মির্জা। পরে বিয়ের দেড় বছর পর গত ১১ অক্টোবর হানিমুনের উদ্দেশে দুবাই যান এ দম্পতি।