এখনো ছেঁড়া পুরোনো বই পড়া সহপাঠীদের খুঁজে বেড়াই

নন্দিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। সাবলীল অভিনয় দিয়ে এরই মধ্যে শোবিজে আলাদা একটি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছেন তিনি। বড়পর্দায় অভিষেক হয়েই করেছেন বাজিমাত। চঞ্চলের কাজ মানে ভিন্ন কিছু। বর্তমানে চঞ্চল দুই পর্দাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এত খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার মাঝেও চঞ্চল খুবই সাধারণ জীবনযাপন করেন, সেটা অনেকেই জানেন। ছেলে শুদ্ধর নতুন বইয়ের মলাট লাগাতে গিয়ে নিজের জীবনের এক গল্প শেয়ার করেছেন এই অভিনেতা। অন্তর্জালে জানিয়েছেন, দুই কারণে স্কুলজীবনে কখনো নতুন বই পড়া হয়নি তার।

ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি লিখেছেন, স্কুলজীবনে নতুন ক্লাসে ওঠার পর বইয়ে মলাট লাগানোর কথা সবারই মনে থাকার কথা। আমরা যারা গ্রামের স্কুলে পড়ালেখা করেছি, তাদের অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন রকমের। নতুন ক্লাসের নতুন বই, মলাট লাগানো… এগুলো ছিল উৎসবের মতো। পুরোনো ক্যালেন্ডার/সিমেন্টের ব্যাগ দিয়ে নতুন ক্লাসের বইয়ে মলাট দেওয়া, এখনো স্মৃতির অংশ হয়ে আছে।

যাদের নতুন বই কেনার সামর্থ্য ছিল, তাদের আনন্দটা ছিল ভিন্ন মাত্রার। দুটি কারণে আমার কখনো স্কুলজীবনে নতুন বই পড়া হয়নি। প্রথমত, আমার আগের বোনটি আমার এক ক্লাস উপরে পড়তো, পুরো স্কুলজীবন ওর পুরোনো বই আমাকে পড়তে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, দরিদ্রতার কারণে আমাদের বাবার সামর্থ্যই ছিল না নতুন বই কিনে দেওয়ার। নতুন ক্লাসে ওঠার পর যখন দেখতাম, সহপাঠীরা নতুন চকচকা বই পড়ছে, তখন খুব লোভ হতো। আর সে কারণেই প্রায় কোমায় চলে যাওয়া, পুরনো বইগুলোকে খুব সুন্দর করে মলাট লাগিয়ে, বইয়ের ক্ষত আর নিজের মনের ক্ষত, দুটোই ঢেকে রাখতে রাখতেই স্কুলজীবন পার করেছি।

তিনি আরও লিখেছেন, অবশ্য শান্তি একটাই, পুরোনো ছেঁড়া বই পড়েও নতুন বই পড়া সহপাঠীদের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্লাসে প্রথম বা দ্বিতীয় হতাম। আসলে ছাত্র হিসেবে তো খারাপ ছিলাম না! আজ যখন আমার ছেলে শুদ্ধর নতুন ক্লাসের নতুন বইতে, আদর করে মলাট লাগিয়ে দিচ্ছিলাম, তখন সত্যি উৎসব মনে হচ্ছিলো।

ছোট বেলার এ রকম অনেক ছোট ছোট অপ্রাপ্তিগুলো ভুলতে ভুলতেই আজ এখানে পৌঁছানো। আমাদের সন্তানেরা, যদি শুধু এটুকু বুঝতে পারতো যে, সারা জীবন ছেঁড়া বই পড়ে, তোমাদের বাবারা তোমাদের হাতে এক সেট নতুন বই তুলে দিতে পেরে নিজেদের অপ্রাপ্তির সব কষ্ট ভুলে যায়, তাহলে বোধহয় ওরা সত্যিই মানুষ হওয়ার প্রেরণা পেতো। তাহলে আমাদের জীবন সংগ্রামও সার্থক হতো।

এখনো আমি, আমার ছোটবেলার সেই নতুন বই পড়া সহপাঠীদের চেয়ে, ছেঁড়া বা পুরোনো বই পড়া সহপাঠীদেরকেই বেশি খুঁজে বেড়াই। আর মনে মনে প্রার্থনা করি, আমাদের সন্তানেরা মানুষ হোক।