সবুজ উদ্যোক্তা তৈরীর জন্য তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে-ড. আতিউর রহমান

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), উন্নয়ন সমন্বয় ও বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণ বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)-এর যৌথ উদ্যোগে আজ (৩০ ডিসেম্বর) বুধবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ অর্থনীতির সবুজ পুনরুদ্ধার: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।

বাপার সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের চেয়ারম্যান ড. আতিউর রহমান এর সভাপতিত্বে এবং বাপার সাধারণ সম্পাদক, শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় উক্ত ওয়েবিনারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বাপার সহ-সভাপতি ও বেন এর প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম, ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর ইনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইইডি) এর পরিচালক ড. সালিমুল হক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, পাওয়ার ডিভিশন এর সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও স্রেডার সদস্য, অধ্যাপক সিদ্দিক জোবায়ের, বাংলাদেশ সোলার এন্ড রিনিউয়েবল এনার্জি এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট ড. দিপাল চন্দ্র বড়ুয়া প্রমুখ।

এতে আয়োজক সংগঠনের অন্যান্য প্রতিনিধিগণ, পরিবেশবিদ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতাগণ অংশ গ্রহণ করেন।

সভাপতি ড. আতিউর রহমান তার মূল বক্তব্যে বলেন, সবুজ উদ্যোক্তা তৈরীর জন্য তরুনদের সম্পৃক্ত করতে হবে সাথে সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রে গ্রীন রিকোভারীর বিষয়টি সম্পৃক্ত করতে হবে। আমাদের এখন গ্রীন ফাইনান্সের দিকে যেতে হবে। এই লক্ষ্যে গ্রীন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড তৈরী করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রীন রিকোভারীর জন্য ১৫০টির মত প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছে। গ্রিন এনার্জির দিকে দেশের পরিকল্পনাকে পুর্নবিবেচনা করার এখনি শ্রেষ্ঠ সময় উল্লেখ করে তিনি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যক্তি পর্যায়ে উৎসাহ প্রদানের অনুরোধ করেন। তিনি মনে করেন, সরকার জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতে যে ভর্তুকি দেয়, তা সাধারণ মানুষকে দিলে, দেশে সৌর বিদ্যুতের বিপ্লব ঘটে যেতো। তিনি আরো বলেন, এটি একটি ম্যরাথন দৌড়; এ দৌড়ে থেমে গেলে চলবে না। আমাদের নিজ নিজ যায়গা থেকে তিনি গ্রীন রিকোভারীর জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।

ড. নজরুল ইসলাম বলেন, মানুষের সার্বজনিন সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য গ্রীন রিকোভারীর কোন বিকল্প নেই। আমাদের এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বর্তমানের নবায়নযোগ্য জ্বালানী মানানসই নয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। যেখানে বিশ্বের সমস্ত দেশ কয়লার ব্যবহার বন্ধ করে দিচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ নতুন করে চালু করছে যা গ্রীন রিকোভারীরর জন্য মোটেও শোভনীয় নয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও দেশের উন্নয়নের বড় বড় উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহনে আমরা বিদেশীদের উপর নির্ভর করে থাকি। সরকার ডেল্টা প্ল্যান এবং জ্বালানী নীতিসহ সব প্রকল্পগুলো বিদেশীদের দ্বারা করছে। তিনি দেশের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা দেশীয় অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করার পরামর্শ দেন।

ড. সালিমুল হক বলেন, গরীদের বাদ দিয়ে গ্রীন রিকোভারী কখনই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এর জন্য আমরা সবাই কাজ করছি বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে একত্রে কাজ করা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। আমাদের জ্ঞান নির্ভর গ্রীন রিকোভারী করতে হবে এবং সরকারের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেদেরকেই আগে উদ্যোগ নিতে হবে।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের চিন্তার জায়গাটা পরিস্কার করতে হবে। আমরা যে সমস্ত উন্নয়ন করছি সেটা প্রাকৃতিক ভারসাম্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন করতে হলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, গ্রীন রিকোভারীর জন্য প্রকল্পের মূল্য নির্ধারণ, অর্থ এবং প্রযুক্তি এই তিনটি বিষয় অত্যন্ত জরুরী । যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান দূষণ করবে তাদেরকে একটি বড় অংশ ক্ষতিপূরন দিতে হবে, কিন্তু বাংলাদেশে যারা পরিবেশের ক্ষতিকরে তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তারা পরিবেশ-প্রকৃতির ক্ষতি করেও পার পেয়ে যায়। তিনি সবার প্রতি এ ধ্যান-ধারণা থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানান।

অধ্যাপক সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার বিষয়ে মানুষের ধারণা পরিবর্তন করতে হবে। ফসিল ফুয়েলের বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার বাড়াতে হবে তবেই দেশ পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে। আমাদের মানুষকে বুঝাতে হবে যে কোনভাবেই নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যয় অন্যান্য উপায়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়ে বেশি হবে না। আমরা ছাদের উপরে সোলার প্যানেল বসিয়ে ৫০০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানী গ্রীডের আওতায় আনতে পারি।

ড. দিপাল চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, আমাদের সরকারের সাথে কাজ করতে হবে। সেই জন্য তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানীর জন্য আলাদা ডিভিশনের দাবী করেন। তিনি বলেন, আলাদা ডিভিশন থাকলে নবায়নযোগ্য জ্বালানী শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং গ্রীন রিকোভারীরও সফল হবে। তিনি সরকারের ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পে তিতাস গ্রামে মডেল হিসেবে কাজ শুরু কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এখানে আমরা মানুষকে বর্তমান বিদ্যুতের চেয়ে ৫০% কম খরচে নবায়নযোগ্য জ্বালানী দিতে সক্ষম হবো। তা দিয়ে কৃষক ইরিগেশন করতে পারবে এবং এটি গ্রীডে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।