চলন্ত বাসে সেই তরুণীকে গণধর্ষণের পরিকল্পনা করেছিল আসামিরা

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে চলন্ত বাস থেকে লাফ দিয়ে ধর্ষণ থেকে রক্ষা পাওয়া সেই তরুণীকে চালক ও সহযোগীরা গণধর্ষণের পরিকল্পনা করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

রোববার সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

গত ২৬ ডিসেম্বর সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি আত্মীয়ের বাসা থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে বাসে ধর্ষণচেষ্টার শিকার হন ওই তরুণী।

ধর্ষণ এড়াতে মেয়েটি বাস থেকে লাফ দেন। পরে গ্রামবাসী আহতাবস্থায় দিরাই হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

সিআইডি জানিয়েছে, চিকিৎসা শেষে ওই নারী বাসায় ফিরেছেন। প্রধান অভিযুক্তকে শনাক্তও করেছেন।

প্রধান অভিযুক্ত বাসচালক মো. শহীদ মিয়া সিলেট থেকে সুনামগঞ্জগামী বাস ফাহাদ অ্যান্ড মায়শা পরিবহনের চালক। তিনি সিলেটের জালালাবাদের মোল্লারগাঁওয়ের তৌফিক আহমেদ ওরফে মইন্নার পুত্র।

গতকাল শনিবার এ মামলার প্রধান আসামি শহীদ মিয়াকে সুনামগঞ্জের পুরনো বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করে সিআইডির একটি দল। এর আগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বাসের কন্ডাক্টর রশিদকে গ্রেফতার করেছে। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি আরও জানায়, গ্রেফতারের আগে শহীদ ঢাকায় এসেছিলেন। এর আগে সিআইডি শহীদের ছোট ভাই মো. কছির ও দুলাভাই সুমনকে আটক করে। শহীদকে গ্রেফতারে ভোগড়া বাইপাস এবং উত্তরার দিয়াবাড়িতেও অভিযান চালায় সিআইডি।

ভিকটিম নারীর সিলেট থেকে দিরাই যাওয়ার কথা ছিল। সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের ১০ কিলোমিটার আগে একটি বাইপাসে নেমে ওই নারী অন্য একটি পরিবহনে করে দিরাইতে যেতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু বাসচালক বাসটি সরাসরি সুনামগঞ্জে নিয়ে যান। তার পর দিরাইয়ের দিকে রওনা দেন। সব যাত্রী সুনামগঞ্জে নেমে যাওয়ায় বাসে তখন ওই নারী ছাড়া আর কেউ ছিল না।

এ সময় বাসচালক স্টিয়ারিং বক্করের হাতে ছেড়ে দেন ও ভুক্তভোগী নারীকে চুলের মুঠি ধরে বাসের পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ওই নারী জোরে চিৎকার করেন ও শহীদকে ধাক্কা দিয়ে বাসের সামনে চলে আসেন। এর পর সম্ভ্রম বাঁচাতে সুজানগর নামক স্থানে চলন্ত বাস থেকে লাফ দেন।

পরে এলাকাবাসীর ধাওয়ায় একপর্যায়ে বাস ফেলে পালিয়ে যান আসামিরা। আহত নারীকে প্রথমে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সিআইডি বলছে, চালক ও সহযোগীদের গণধর্ষণের পরিকল্পনা থাকতে পারে। না হলে সুনামগঞ্জ থেকে বাস ঘুরিয়ে দিরাইয়ের পথে আসত না বাসটি। বক্করও বাসচালককে সুযোগ করে দিতেন না।

সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক হাসিব আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, তাদের ধারণা– বাসচালক ও তার সহকারীরা গণধর্ষণের পরিকল্পনা করেছিলেন। অতীতেও তারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা, খোঁজ নেয়া হচ্ছে।