করোনার ওষুধ তৈরির দাবি রামদেবের, তীব্র বিতর্ক

বিশ্বে প্রথম করোনার ওষুধ তৈরির দাবি করলেন বাবা রামদেব। তাঁর সংস্থা পতঞ্জলির তৈরি করোনেল ওষুধকে ভারতের আয়ুষ মন্ত্রণালয় ছাড়পত্রও দিয়েছে বলে যোগগুরুর দাবি। রামদেবের এমন দাবি নিয়ে দেশটিতে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

বাবা রামদেব দাবি, করোনার ওষুধ তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন। তার নাম করোনেল। ওষুধের ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়েছে। সেখানে একশ শতাংশ ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রণালয় ওই ওষুধ ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছে।

রামদেবের আরো দাবি, তাঁদের এই করোনার ওষুধ গবেষণা ভিত্তিক, তথ্যপ্রমাণ ভিত্তিক ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি। যত প্রোটোকল, যত মাপদণ্ড আছে, সব মানা হয়েছে। করোনেল নিয়ে নয়টি রিসার্চ পেপার প্রকাশিত হয়েছে। ১৬টি পেপার প্রকাশের অপেক্ষায়।

এই ওষুধ ২০২০ সালেও বের করা হয়েছিল। কিন্তু তখন ভারতের আয়ুষ মন্ত্রণালয় ওষুধটির বিক্রি স্থগিত রাখে। এখন তারা অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে বলে রামদেব জানিয়েছেন। রামদেবের সহযোগী বালকৃষ্ণের দাবি, তখন রিসার্চ পেপার প্রকাশিত হওয়া, তার রিভিউ নিয়ে সমস্যা ছিল। এখন সে সব হয়ে গেছে। তারা লাইসেন্স পেয়ে গেছেন। করোনার ওষুধ হিসেবে করোনেল ব্যবহার করা যাবে। শুধু ভারত নয়, ১৫৪টি দেশের জন্য অনুমোদনও তাঁরা পেয়েছেন।

এবিপি নিউজ টিভি চ্যানেলে রামদেব দাবি করেছেন, এক কোটি মানুষ তো করোনেল বড়ি খেয়ে ঠিক হয়েছেন! ২৫-৩০ কোটি মানুষ প্রাণায়াম, কপালভাতি, অনুলোম-বিলোম করে (এগুলো যোগব্যায়াম) করে ও তুলসির কাড়া পান করে ঠিক হয়েছেন। সরকারি সমীক্ষার ভিত্তি তিনি এই দাবি করছেন। তিনি ভ্যাকসিনের বিরোধী নন। কিন্তু ২০২১-এ অ্যালোপ্যাথির বিকল্প তিনি দেবেন। বালকৃষ্ণ জানিয়েছেন, নতুন স্ট্রেইন বিরুদ্ধে কাজ করে এমন নতুন ওষুধ আনছেন। তাঁদের ৩০০ গবেষক আছেন। তাঁরা এই কাজ করছেন।

তবে অনেক চিকিৎসকই করোনার ওষুধ নিয়ে রামদেবের দাবি মানতে চাইছেন না। ফুসফুসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পার্থপ্রতিম বোস ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘এই ধরনের ওষুধের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়। তুলসি, মধু, ত্রিফলার মতো জিনিসের মধ্যে রোগপ্রতিরোধের কিছু ক্ষমতা থাকে। তা দিয়ে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা বাড়ানো যায়। এই জিনিসগুলো আমিও ব্যবহার করি। কিন্তু করোনার ওষুধ মানে তো প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো নয়, রোগের প্রতিকার করতে হবে।’

কলকাতার চিকিৎসক সাত্যকি হালদার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘রামদেব যে দাবি করছেন, তার তথ্যপ্রমাণ সামনে আসা দরকার। করোনার ওষুধ যখন সারা বিশ্বে কেউ তৈরি করতে পারেননি, তখন রামদেব কী করে সেই ওষুধ বের করে ফেললেন তা জানা খুবই জরুরি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে তিনি যে কাজ করলেন তা অভূতপূর্ব, তাতে দেশের মুখ উজ্জ্বল তো হলোই না, বরং মুখ পুড়লো।’

রামদেব এর আগেও ক্যান্সার সারানোর দাবি করেছেন। এদিনও তিনি ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের রোগ সারানোর দাবি করেছেন। তিনি বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘টাই পরে যে সব বিশেষজ্ঞ নিজেদের ঈশ্বর মনে করেন, তাঁদের ভ্রম আমি ভেঙে দিয়েছি।’ কিন্তু অতীতেও চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা তার দাবির বিরোধিতা করেছেন। এখনো করছেন।

রামদেব এই দাবি করার পর সামাজিক মাধ্যমেও বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। আর যেহেতু এবার করোনার ওষুধ তৈরির দাবি করা হয়েছে, তাই বিতর্ক তীব্র হয়েছে। রামদেব সাংবাদিক সম্মেলনে বারবার করে জানিয়েছেন, হর্ষবর্ধন ডাব্লিউএইচও-র গভর্নিং কাউন্সিলের প্রধান হয়েছেন। হর্ষবর্ধনও সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন। তবে তিনি করোনেল নিয়ে বিশেষ কিছু বলেননি। ভারতের আয়ুর্বেদ কী করে সারা বিশ্বে গুরুত্ব পাচ্ছে, সেই কথা বলেছেন। আয়ুর্বেদের জন্য আগের এনডিএ সরকার কী করেছিল, এখন মোদি সরকার কী করছে সেটাই জানিয়েছেন।

সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা।1