মুজিববর্ষের মধ্যেই সবার জন্য ঘর এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথে একটি সমৃদ্ধিশীল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। তিনি চেয়েছিলেন এ দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। মুজিববর্ষের মধ্যেই সবার জন্য ঘর এবং সব ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সোমবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন।

দলের নেতারা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। আর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী প্রমুখ। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছিলেন।

তিনি যেমন জাতিসংঘে বাংলায় বক্তব্য দিয়ে এ ভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, তেমনি দেশের অভ্যন্তরেও মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছিলেন। উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করেছিলেন। নির্যাতিত নারী ও শিশুদের পুনর্বাসন, অবকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। শহীদ পরিবারগুলোকে সহায়তা করেছিলেন। একইসঙ্গে রাষ্ট্রের সবগুলো দিক নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাকে সময় দেয়া হয়েছিল মাত্র সাড়ে তিন বছর। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু আজ যখন দেখি রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রে উন্নত এবং শক্তিশালী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি, তখন আশ্চর্য হতে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের হত্যাকান্ডের ঘটনা না ঘটলে দেশ আরো অনেক আগেই উন্নত দেশে পরিণত হতো।

সরকার প্রধান বলেন, আজ জাতির পিতা নেই। কিন্তু তিনি নির্দেশনা রেখে গেছেন। বঙ্গবন্ধু সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। শিক্ষা-দীক্ষায়-প্রযুক্তিতে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে এবং অর্থনৈতিকভাবে একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। তার সেই নির্দেশিত পথেই সরকার কাজ করছে। দেশের গৃহহীনদের বাড়ি দেয়া হচ্ছে। মুজিববর্ষে সব গৃহহীনের ঘর নিশ্চিত করার পাশাপাশি সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। একজন মানুষের যদি একটি ঠিকানা থাকে, ঘর থাকেÑ তাহলে তার জীবন অর্থবহ হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করেছিলেন ১৯৪৮ সাল থেকেই। তিনি যে অনেক আগে থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা তার বক্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি ’৫২তে ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তারপর ’৫৬তে শহীদ মিনার তৈরি ও ভাষার স্বীকৃতি আওয়ামী লীগের হাত ধরেই আসে। ১৯৭১ সালে তার একটি বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার অধিকারের দাবিতে সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি ছিল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকার অর্জনের আন্দোলন। এরপর ’৬৬তে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দিয়েছিলেন। এসব তিনি করেছিলেন নিপীড়িত, ক্ষুধার্ত, সহায়-সম্বলহীন, অসহায় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। তিনি নিজের জন্য কিছু করেননি, কখনো ভাবেননি, কোনো চাওয়া-পাওয়া রাখেননি। সবই করেছিলেন এদেশের ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষের জন্য। কিন্তু তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। তার অংশ হিসেবেই সবার জন্য ঘরের ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। শিক্ষাকে অবৈতনিক করা, প্রতিটি ইউনিয়নে হাসপাতাল গড়ে তোলা এবং সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য খাসজমি বিতরণ ও গুচ্ছগ্রাম নামের প্রকল্প নিয়েছিলেন। সরকার তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কাজ করে যাচ্ছে। এদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা এবং বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি সবাইকে সোনার বাংলা গড়ে তোলার কাজে যার যার জায়গা থেকে আত্মনিয়োগ করতে আহ্বান জানান।