নাতনিকে কারণে-অকারণে মারধর করতেন তামিমার মা!

নাতনি রাসদিয়া হাসান তুবাকে কারণে-অকারণে বিমানবালা তামিমা তাম্মির মা মারধর করতেন বলে তুবা নিজেই অভিযোগ করেছে। আর এ কারণে সে নানিবাড়ি থেকে দাদিবাড়িতে চলে যায়।

শুধু তাই নয়, তুবার খোঁজখবর নেওয়ার ব্যাপারে যে দাবি তামিমা করেছেন তাও নাকচ করে দিয়েছে আট বছন বয়সি এই শিশু।

তুবা বলেছে, ‘মা কখনই আমার তেমন একটা খোঁজখবর নিত না। মায়ের বিয়ের খবর টিভিতে দেখেছি। এ ছাড়া বাবার বিরুদ্ধে আমাকে তুলে নেওয়ার যে অভিযোগ মা করেছে তাও মিথ্যা।

মা তামিমা ও নানি সম্পর্কে তুবা জানায়, নানি তাকে মারধর করত। নানি বাবাকেও দেখতে পারত না। কারণে-অকারণে আমাকে চড়থাপ্পড় দিত। নানি আমাকে সারাক্ষণ ধমকের ওপর রাখত। এদিক-ওদিক হলেই রাগারাগি-গালাগালি করত। সে কারণেই আমি স্বেচ্ছায় বাবার সঙ্গে দাদির কাছে চলে আসি। বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসে। মা আমাকে কখনই তেমন একটা ভালোবাসত না। আদরও করত না।

সে আরও জানায়, বেশিরভাগ সময়ই মা বাসার বাইরে থাকত। নিজে থেকে কখনও আমায় ফোন দিত না। আমি ফোন দিলে ব্যস্ত আছি বা প্লেনে আছি বলে লাইন কেটে দিত। বাবা, দাদি, দাদা, চাচ্চু আমায় অনেক ভালোবাসে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তুবা বলে, ‘মা এখন আর আমায় ফোন দেয় না। আমার সাথে কথাও বলে না। মা অনেক পচা হয়ে গেছে। সে আরেকজনকে বিয়ে করেছে। আপনারা আমার মাকে এনে দিন। আমি মা আর বাবাকে নিয়ে সবাই এক সাথে থাকব।’

রাকিবের মা সালমা সুলতানা বলেন, ‘১০-১২ বছর আগে রাকিবের সঙ্গে বিয়ে হয় তামিমার। প্রেম করে বিয়ে করায় প্রথমে আমরা মেনে নিইনি। পরে তুবার জন্ম হলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। শুরু থেকেই তামিমার আচরণ কিংবা স্বভাব কোনোটাই ভালো ছিল না। তবু আমার ছেলে আর নাতির মুখ চেয়ে কখনই কিছু বলিনি। তবে রাকিবের বউ থাকাবস্থায় সে আরেকটা বিয়ে করবে সেটি আমাদের কল্পনাতেও ছিল না।

তিনি আরও বলেন, তুবাই প্রথম টেলিভিশনে দেখে আমার কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে, আর বলে যে, মা আবার বিয়ে করেছে। গত ২৬ আগস্ট ছিল তুবার জন্মদিন। সেদিন আমরা কেক কেটেছি, তুবা অনুষ্ঠানে নাচ করেছে। ভিডিওকলে তামিমাকে সব দেখিয়েছি আমরা। সে-ও আনন্দ পাওয়ার ভান করেছে সেদিন। কিন্তু তখনও ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি যে সে এ রকম একটা কিছু করবে।

সালমা সুলতানা বলেন, তামিমা নিজে থেকে ফোন করে কখনই তুবার খোঁজখবর নিত না। তুবা মাকে ফোন করে কথা বলতে চাইলেও নানা ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে লাইন কেটে দিত। মায়ের বিয়ের খবর টিভিতে দেখে মেয়েটা যে কত কষ্ট পেয়েছে তা বলে বোঝাতে পারব না। সারা দিন মনমরা হয়ে বসে থাকে। কারও সঙ্গে তেমন একটা কথাও বলে না। বাড়ির একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে তুবা। বন্ধুদের সঙ্গেও সে এখন আর খেলতে যায় না।

রাকিবের বাসা ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার পৌর শহরে। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী। উপজেলার তালতলাবাজারে তার টিন, রড ও সিমেন্টের দোকান রয়েছে। রাকিব নিজে ঢাকায় ব্যবসা করেন। তার ছোট ভাইও একজন ব্যবসায়ী।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, রাকিবের স্ত্রী কখনই নলছিটিতে আসেনি। এলাকায় নম্র ও ভদ্র হিসেবে পরিচিত রাকিবের বিরুদ্ধে কারও কোনো নালিশও নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘রাকিব-তামিমার সংসারে অশান্তি নিয়ে কোনো কিছু শুনিনি কখনও। তবে এ রকম একটি ফুটফুটে শিশুর জীবন ধ্বংস করে তামিমা যা করেছে, তার জন্য ভবিষ্যতে তাকেই ভুগতে হবে।’

গত কয়েক দিন ধরেই ক্রিকেটার নাসিরের সঙ্গে তামিমার বিয়ে নিয়ে তোলপাড় চলছে। তালাক না দিয়ে নাসিরকে বিয়ে করার অভিযোগে রাকিব বুধবার ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাও করেছেন। আর ওই দিনই সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন নাসির ও তামিমা।

সংবাদ সম্মেলনে তামিমা জানান, ক্রিকেটার নাসির হোসেনকে বিয়ে করে তিনি কোনো ভুল করেননি।

তিনি এটিও দাবি করেন, জন্মের পর থেকে একমাত্র মেয়েকে নিজের কাছেই রাখেন এবং ডিভোর্সের পর সব সময় মেয়ের খোঁজ নেন সব বিষয়। তবে দাবি করেছেন, ২০১৯ সালে রাকিব হাসান মেয়ের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ওকে নিয়ে যায়।

‘২০১৯ সাল পর্যন্ত আমার কাছেই ছিল। আমি আমার মেয়ের ফিট হওয়া, পড়াশোনাসহ সব কিছুই দেখেশোনা করেছি। আমাদের মধ্যে সব সময় যোগাযোগ হয়েছে কিন্তু ২০১৯ সালে মেয়ের সঙ্গে ওর বাবা দেখা করবে বলে তাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়।’

এ ছাড়া তিনি তালাকের কপি দেখিয়ে রাকিব হাসানের গ্রামের বাড়ি ভৈরবপাশা ইউনিয়ন পরিষদেও পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

তবে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মাকসুদুল হক মাকসুদ বলেছেন, সাধারণত রেজিস্টার্ড ডাকযোগে এ জাতীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়। আর রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পাঠানো হলে তা না আসার কোনো কারণ নেই। আমাদের রেজিস্টারে এ ধরনের নোটিশ আসার কোনো প্রমাণও লিপিবদ্ধ নেই।

‘এ ছাড়া তামিমার দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে পুনরায় যাচাই করে দেখেছি। কিন্তু কোনোরকম নোটিশ আসার রেকর্ড নেই।’