আওয়ামী লীগের কৃতিত্বে ৫০ বছর পর জাতি হিসেবে আমরা বিভক্ত: ফখরুল

mirza fokrul
ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘৫০ বছর পরে জাতি হিসেবে আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি। সেটার জন্য কৃতিত্ব আওয়ামী লীগেরই। জাতিকে প্রথম থেকে তারা স্বাধীনতার পক্ষে, স্বাধীনতার বিপক্ষে, চেতনার পক্ষে, চেতনার বিপক্ষে নিয়ে গেছে।’

আজ শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময়কালে এক সাংবাদিকের প্রশ্রের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। গুলশানে হোটেল লেকসোরে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির আয়োজনে গণমাধ্যমের সাথে এই মতবিনিময় সভা হয়।

অনুষ্ঠানে কারাগারে বন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

তিনি বলেন, ‘ওই চেতনা নিয়ে কি দেশ স্বাধীন হয়েছিলো যে আমি গণতন্ত্র লুট করে নেবো, আমি আগের রাত্রে নির্বাচন করে সরকার লুট করবো, আমি কোষাগার খালি করে দেবো। আমি একজন লেখক একজন নিরীহ মানুষ, তিনি লেখেন সেই অপরাধে তাকে জেলে পাঠিয়ে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু ৭ মার্চ নয়, আমরা ২রা মার্চ, ৩রা মার্চ পালন করছি। অমরা ২রা মার্চ কেনো করছি? সেদিন প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন আসম আবদুর রব তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা। আমরা সেটাও পালন করছি, দ্যাট ইজ এ পার্ট অব হিস্ট্রি। তিন তারিখ কি? স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন শাহজাহান সিরাজ সাহেব। এটাকে অস্বীকার করবো কি করে? আজকে তার রাজনৈতিক ধারা ভিন্ন, রাজনৈতিক দল ভিন্ন হতে পারে কিন্তু দ্যাট ইজ রি্য়েলিটি, দ্যাট ইজ পার্ট অব হিস্ট্রি।’

‘‘ঠিক একইভাবে যে ভাষণ শেখ মুজিবুর রহমানের অবশ্যই ইতিহাস। অবশ্যই তার সন্মান, তার মর্যাদা তাকে দিতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে, ৭ মার্চ আপনি যখন পালন করবেন তখন এই কথা বলবেন ৭ই মার্চের ডাকে হয়ে গিয়েছিলো কিনা সেটা তো আলোচনার মধ্যে আসবে, ইতিহাস থেকে আসবে, ইতিহাসের সমস্ত বই থেকে আসবে।’ বলেন তিনি।

‘কাউকেই খাটো করার কোনো রকম ইচ্ছা আমাদের নেই্ এবং আমরা বিশ্বাস করি সেটা উচিতও না।’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কে বক্তৃতাতে ৭ মার্চে কি বলেছিলেন, পরবর্তিকালে ২ রা মার্চে কি বলেছিলেন, ৩রা মার্চে কি বলেছিলেন, ৯ মার্চ মওলানা ভাসানী কি বলেছিলেন পল্টন ময়দানে-এগুলো ইতিহাস। একই সঙ্গে মাহবুবউল্লাহ কি বলেছিলেন সেটাও একটা ইতিহাস।’

‘একই সঙ্গে ২৬ মার্চ শহীদে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে ঘোষণা জাতিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলো এবং সমগ্র জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো এটাও ইতিহাস। সুতরাং এগুলো কোনটাই অস্বীকার করা যাবে না।’ বলেন তিনি।

জাতিকে বিভক্ত করার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের ৫০ বছর পরে জাতি হিসেবে আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি। সেটার জন্য কৃতিত্ব আওয়ামী লীগেরই। জাতিকে প্রথম থেকে তারা স্বাধীনতার পক্ষে, স্বাধীনতার বিপক্ষে, চেতনার পক্ষে, চেতনার বিপক্ষে নিয়ে গেছে।’

‘ওই চেতনা নিয়ে কি দেশ স্বাধীন হয়েছিলো যে আমি গণতন্ত্র লুট করে নেবো, আমি আগের রাত্রে নির্বাচন করে সরকার লুট করবো, আমি কোষাগার খালি করে দেবো। আমি একজন লেখক একজন নিরীহ মানুষ তিনি লেখেন সেই অপরাধে তাকে জেলে পাঠিয়ে তাকে মৃত্যু বরণ করতে হবে।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে যে ডিজিটাল আইন তৈরি করা হয়েছে আপনারা সাংবাদিকরা তার সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। আপনাদের প্রায় ৪শ জন বিভিন্নভাবে ভুক্তভোগী, কত জনকে জেল খাটতে হয়েছে। আপনাদের ফটোগ্রাফার কাজল, তার আগে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এরা সবাই। সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। এদের অপরাধ শুধু লেখার জন্য। আমার প্রশ্ন এই জায়গায় যে, এর জন্য তো আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেনি, এজন্য আমরা স্বাধীনতা চাইনি।”

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে আজকের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য আমরা সারা বছরের কর্মসূচি গ্রহন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের যে সূচনা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ততকালীন মেজর জিয়া ২৫ মার্চ কালো রাতের শেষ প্রহরে অথবা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অভ্যন্তর থেকে রিভোল্ট করে কর্ণেল জানজুয়াকে গ্রেপ্তার করে তিনি অস্ত্রাগার থেকে সকল অস্ত্র নিয়ে বাঙালীদের সজ্জিত করে কেন্টমেন্ট থেকে বের হন। পরবর্তিকালে ২৭ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন।জিয়াউর রহমান প্রথম পাকিন্তানি সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সরাসররি পাকিস্তানি বাহিনীর প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। তিনিই প্রথম সেক্টার কমান্ডার, প্রথম ‘জেড’ ফোর্সের অধিনায়ক।’

‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক গত ১২ বছর দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিতর্কিত করার জন্য, নানাভাবে বিকৃত করার জন্য হেনচেষ্টা নাই তা করা হয় নাই। যিনি প্রথম যুদ্ধ ঘোষণা করলেন, যিনি প্রথম সেক্টার কমান্ডার, প্রথম ফোর্সেস কমান্ডার তাকে বিতর্কিত করার জন্য কি না করেছে। সর্বশেষ তার খেতাব বাতিলের জন্য আজকে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহন করেছে,যে প্রচেষ্টা নিচ্ছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিশ্বাস করি, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করার অর্থ মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা।’

মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা থেকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতেই বিএনপির স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহন করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘কে কার খেতাব নিলো, না নিলো তাতে জিয়াউর রহমানের কিচ্ছু যায় আসে না’

জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলে জিয়াউর রহমান এবং বিএনপির কিচ্ছুই যায় আসে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে। কে কার খেতাব নিলো, না নিলো তাতে জিয়াউর রহমানের কিচ্ছু যায় আসে না আর এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষেরও কিছু যায় আসে না।বিএনপিরও কিচ্ছু যায় আসে না।’

‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান খেতাব কারো দয়ায় নয় বা কোনো সরকারের বা কোনো ব্যক্তির আনুকুল্যে নয়। তিনি এটা অর্জন করেছিলেন তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটা জাতিকে তার স্বাধীনতা যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে তিনি ঘোষণার মধ্য দিয়ে করেছিলেন। এটা তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে, অনুপ্রাণিত করার মধ্য দিয়ে তা তিনি অর্জন করেছিলেন। এই খেতাব স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান সরকারই দিয়েছিলো। এই খেতাবকে তুলে নেওয়ার যে অপচেষ্টা তার জনগন কোনোদিনই মেনে নেবে না এবং এটাতে জনগনের কোনো যায়ও আসে না।’

মুক্তিযুদ্ধকালে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা বিএনপিতে বেশি বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন জিয়াউর রহমান। এর পরে যিনি চেয়ারপারসন হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া তিনিও স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন অংশগ্রহনকারী ও নির্যাতিত একনেত্রী। তিনি কারাবরণ করেছেন একাত্তর সালে এবং আজকেও তিনি যে লড়াইটা করছেন এখনো কারাবন্দি আছে তার একটা মাত্র লক্ষ্য গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য।’

‘স্বাধীনতার কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় বা স্বাধীনতা কোনো গোষ্ঠি বা দলেরও সম্পত্তি নয়। স্বাধীনতা এদেশের লক্ষ-কোটি সমস্ত মানুষের সম্পত্তি, এর মালিক হচ্ছে জনগন।’

এই সময়ে যখন গণতন্ত্র নেই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে, তখন আপনার সমাবেশ করতে দেয় না, ভেঙে দিচ্ছে এরকম পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান কেনো করছেন প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ সূবর্ণ জয়ন্তী করছি কার? স্বাধীনতার। এটা আমার, এদেশের মানুষের, কৃষকের, শ্রমিকের সকলের। এটা বাস্তবতা। এটা স্বপ্ন আমার, এটা আমার সব কিছু, এটাই আমার ভিশন, এটা আামার মিশন। আমি এখানে স্বাধীনভাবে একটা জাতিকে নির্মাণ করতে চাই।”

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানাবে বিএনপি

বিএনপি আয়োজিত স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানাবে বিএনপি। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অবশ্যই আমাদের নিমন্ত্রণপত্র তাদের কাছে যাবে। আজকেই যাবে।”

গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের মধ্যে দৈনিক যুগান্তরের উপ সম্পাদক আহমেদ দীপু, দৈনিক কালের কন্ঠের উপ-সম্পাদক এনাম আবেদীন, দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক সবুজ ইউনুস, প্রধান প্রতিবেদক লোটন ইকরামসহ বিভিন্ন মিডিয়ার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

মিডিয়া কমিটির আহবায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শ্যামা ওবায়েদের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্‌র চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মিডিয়া কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, আতিকুর রহমার রুমন, শায়রুল কবির খান, ফারজানা শারমিন পুতুল, ইয়াসির খান, মাহমুদা হাবিবা, শফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, মীর সোলায়মান, নুরুল ইসলাম সাজু, বাবুল তালুকদার প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।