আদালতে নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন কিশোর

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আটকের পর ‘নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা’ আদালতে তুলে ধরেছেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর।

বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে কিশোর তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি এ ঘটনায় মামলা নেওয়ারও আবেদন করেন। আদালত তার জবানবন্দি নিয়ে আদেশ পরে দেবেন বলে জানান।

আদালতের কাছে কিশোর বলেন, গত বছরের ২ মে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে তার কাকরাইলের বাসায় ১৭–১৮ জন লোক এসে তাকে প্যান্ট–শার্ট পরে বাইরে আসতে বলেন। এ সময় তার মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়। ১৭-১৮ জনের মধ্যে একজনের নাম জসিম বলে তিনি তখন শুনতে পান। কিশোর ওই লোকদের কাছে জানতে চান, কী অপরাধে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে কি না। তখন তাকে বলা হয়, ‘নিচে গিয়ে গাড়িতে ওঠ, পরে সব জানতে পারবি।’
এরপর ৫ মে র্যা ব হেফাজতে নেওয়ার আগপর্যন্ত তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন করা হয় বলে কিশোর আদালতে দাবি করেন।

কিশোর বলেন, আমাকে আটকের পর নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আদালতের কাছে মামলা নেওয়ার আবেদন করেছি।

কিশোরের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আটকের পর কিশোরকে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনে তার কানের পর্দা ফেটে গেছে। আমরা আজ আদালতে হেফাজতে নির্যাতন আইনে মামলা নিতে আবেদন করেছি। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। এ বিষয় পরে আদেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।

কিশোরের বড় ভাই আহসান কবির গণমাধ্যমকে জানান, তার ভাইকে ২০২০ সালের ২ মে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। তিন দিন নির্যাতনের পর তাকে ৫ মে র্যা বের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে ২ মে কারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল পরবর্তী তিন দিন কারা নির্যাতন করেছিল, তা যেহেতু তারা জানেন না, তাই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন তারা।

নিম্ন আদালতে ৬ বার আবেদন করে ব্যর্থ হয়ে ৩ মার্চ হাইকোর্টে জামিন পান কিশোর। পরদির তিনি তিনি ছাড়া পান।

গত বছরের মে মাসে লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূঁইয়া ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে গ্রেফতার করে র্যা ব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তখন ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। সেই মামলায় দুজন জামিনে মুক্তি পেলেও মুশতাক ও কিশোরের জামিন আবেদন ছয়বার নাকচ হয়। পরে জেলখানায়ই মৃত্যু হয় মুশতাকের।

এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।