থাইল্যান্ডেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান স্থগিত

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান স্থগিতের পর অক্সফোর্ডের তৈরি টিকাটি দেয়া স্থগিত করেছে থাইল্যান্ডও। টিকা নেয়ার পর রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার রিপোর্টে ইউরোপীয় দেশসমূহের পর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশটিও টিকাপ্রদান স্থগিত করল। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিড-১৯ টিকা নেয়ার সঙ্গে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির কোনো ইঙ্গিত নেই।

গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, শুক্রবার থাইল্যান্ডে অক্সফোর্ডের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কর্মসূচি শুরু করার কথা ছিল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচার প্রথম টিকা নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশটি হঠাৎ টিকা প্রদান কর্মসূচি স্থগিত করল।

থাইল্যান্ডের ভ্যাকসিন কমিটির উপদেষ্টা পিয়াসাকল সাকলসাতায়ার্ডন বলেন, থাই নাগরিকদের জন্য ভ্যাকসিন ইনজেকশন অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে। তাড়াহুড়া করে ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু করার কিছু নেই।

গতকাল এক বিবৃতিতে ডেনমার্কের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহীতাদের গুরুতর রক্ত জমাট বাঁধার রিপোর্ট সামনে আসার পর ডেনমার্ক টিকা প্রয়োগের কাজ স্থগিত ঘোষণা করে। বিবৃতিতে বলা হয়, এই পদক্ষেপ সতর্কতামূলক। তবে রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে টিকার নেওয়ার কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। দেশটিতে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত রক্ত জমাটের ২২টি ঘটনা পাওয়া গেছে।

ডেনমার্ক ছাড়া অস্ট্রিয়াও এই টিকা প্রয়োগের কাজ বন্ধ ঘোষণা করেছে। দেশটির দাবি, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়ার পরই তীব্র রক্ত জমাট বাঁধার কারণে ৪৯ বছর বয়সী এক নার্সের মৃত্যু হয়। এছাড়া এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং লুক্সেমবার্গও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার একটি ব্যাচ বাতিল করেছে। এছাড়া টিকা নেওয়ার পর ইতালিতে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (ডিভিটি) বা রক্ত জমাট বেঁধে ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিও মারা গেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ওই বিবৃতিতে ইউরোপীয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) জানিয়েছে, ‘টিকা নেওয়ার কারণে রক্ত জমাট বেঁধে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এমনকি এটা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও তালিকাভুক্ত করা হয়নি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যে ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে; এর থেকে আসলে টিকা নেয়ার লাভই বেশি। করোনার টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে এবং একইসঙ্গে টিকা নেয়ার সঙ্গে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা- সে বিষয়ে তদন্তও অব্যাহত থাকবে।’

সংস্থাটির দাবি, এ পর্যন্ত ইউরোপের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ করোনার এই টিকা নিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যে টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে ৩০টি। এর আগে বুধবার ইএমএ জানায়, অস্ট্রিয়ায় ব্যবহৃত অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা নার্সের মৃত্যুর জন্য দায়ী নয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

আলজাজিরা জানিয়েছে, এই টিকা ইউরোপের ১৭টি দেশে পাঠানো হয়েছিল। তবে ডেনমার্ক এরইমধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার সরবরাহ বাতিল ঘোষণা করেছে। একইভাবে নরওয়ে ও আইসল্যান্ডও উদ্বেগ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার টিকা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে।

নরওয়ের সরকারি স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট জানিয়েছে, ডেনমার্কের মতোই তারাও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার প্রয়োগ স্থগিত রাখবে। নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথের পরিচালক গেইর বুখলম বলেন, করোনা টিকা গ্রহণের সঙ্গে রক্তের জমাট বাঁধার কোনো যোগসূত্র রয়েছে কিনা সেটা জানতে আরও তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি আমরা।

এক বিবৃতির মাধ্যমে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সবার জন্য উন্মুক্ত করার আগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে টিকা গ্রহীতার নিরাপত্তার বিষয়টি গভীরভাবে গবেষণা করা হয়েছে। কারণ রোগীর নিরাপত্তাকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়। পিয়ার রিভিউ করা তথ্যেও এই টিকা মানবদেহের জন্য ভালো সহিষ্ণু বলে দেখা গেছে।