করোনাভাইরাসের নতুন ধরন কেমন?

corona virus test kit

দেশে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নতুন ধরন নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা চলছে। বর্তমানে যে করোনার যে ওয়েব চলছে তার আগের ওয়েবের চেয়ে বেশি ভয়ংকর। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বলেছেন, সবাই সচেতন না হলে যে হারে সংক্রমণ ঘটছে তা হাসপাতাল দিয়ে তা ঠেকানো সম্ভব হবে না।

এ ব্যাপারে দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রিউম্যাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে করোনার যে স্ট্রেইন শনাক্ত হয়েছে, সেটা যুক্তরাজ্য ভ্যারিয়েন্ট বা ইউকে ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। এটি আগের চেয়ে ৬০-৭০ শতাংশ ছোঁয়াছে।

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল বলেন, এখন যে ধরনের করোনাভাইরাস দেখা যাচ্ছে, সেগুলোতে ভ্যাকসিন তথা টিকা প্রতিরোধী একটি চরিত্র পাওয়া যাচ্ছে; ফলে এগুলো দ্রুত ছড়াচ্ছে।

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, অনেকেই করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর নিজেদেরকে নিরাপদ বলে মনে করেছিল। ফলে তারা স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখিয়েছে। অনেকেই মাস্ক ব্যবহারে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এগুলো সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে হচ্ছে।

বিএসএমএমইউ’র এই অধ্যাপক বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ভাইরাস দশগুণ বেশি ছড়িয়েছে।

তিনি বলেন, এখন যে নমুনাগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে তার মধ্যে অধিকাংশই নিয়মিত পরীক্ষা। এখানে অধিকাংশ পরীক্ষা করা হচ্ছে উপসর্গ ছাড়া। যেমন- বিভিন্ন বিভাগের অফিসার বা দেশের বাইরে যাচ্ছে, তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। যদি শুধু যাদের উপসর্গ আছে, তাদের পরীক্ষা করা হতো তাহলে এই সংখ্যা ৩০ শতাংশের বেশি হতো।

মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আক্রান্তের হার আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ও সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন দ্রুত তার রূপ পরিবর্তন করায় শরীর তাকে চিনতে পারছে না । বাংলাদেশে শনাক্ত নতুন ধরনকে কিছু ক্ষেত্রে শরীর চিনতে পারলেও প্রতিরোধ করার সুযোগ পাচ্ছে না। এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত অুস্থ হয়ে পড়ছেন।

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস। প্রতিনিয়ত এটি তার রূপ বদল করেছে। প্রথম শনাক্তের পর থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসটি প্রায় ১২ হাজার ৭০০ বার রূপ বদল করেছে। এদের বেশিরভাগ ধরন ততটা গুরুতর না হলেও কয়েকটি খুবই মারাত্মক। বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া ইউকে স্ট্রেইন মারাত্মক শ্রেণীর অন্তর্গত।’

দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রোবেদ আমিন বলেন, বর্তমানে ইউকে ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি সাউথ আফ্রিকান, সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ান ও ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকহারে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। এগুলো নিজেদের এমনভাবে পরিবর্তন করে ফেলতে সক্ষম যে, আমাদের দেহ তাকে চিনতেই পারছে না। ফলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে শরীর চিনতে পারছে। কিন্তু এটি এত দ্রুত নিজেকে পরিবর্তন করছে যে, প্রতিরোধ করার সুযোগ পাচ্ছে না শরীর।