এবার মৃত্যুপুরী মুম্বাই, রাত-দিন কবর খনন করছেন গোরখোদকরা!

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কাবু গোটা ভারত। দিন যত যাচ্ছে ততই উত্তরোত্তর বাড়ছে সংক্রমণের দাপট। স্বস্তি নেই। চারিদিকে অক্সিজেন, বেডের আকাল। অব্যাহত মৃত্যু মিছিল। ভারতের দৈনিক সংক্রমণের রেশ ইতিমধ্যে চার লাখের ঘরে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় দিনরাত এক করে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন ভারতের প্রথম সারির করোনা যোদ্ধারা চব্বিশ ঘণ্টা নাওয়া খাওয়া ভুলে প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া তারা।

তবে মুম্বাইয়ে শুধু ডাক্তাররা নন, করোনার মৃত্যু মিছিলে দিনরাত এক করে কাজ করে চলেছেন গোরখোদকরা। যদিও ওই কেউই চিকিৎসক নয়, প্রাণ বাঁচাতে পারে না। তবে শেষযাত্রায় মানুষকে সমাধিস্ত করতে ওদের ভূমিকা কোনও অংশে কম নয়।

মারণ করোনার দ্বিতীয় ছোবলে যখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে দিল্লি। এবার মুম্বাইয়ে ঠিক তখনই সারাদিন ক্লান্তিহীন শরীরে করোনায় মৃত মানুষদের সমাধিস্ত করতে কবর খুঁড়ে চলেছেন ওরা। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাকালেই এখন দুটো ছবিই চোখের সামনে ভেসে উঠবে। তা হলো, হাসপাতালগুলিতে ঠাঁই নেই রোগীদের রাখার অন্যদিকে শ্মশানে, গোরস্থানে করোনায় মৃত মানুষের শেষকৃত্যের জন্য লম্বা লাইন।
যদিও অদৃশ্য এই করোনাকে এখন আর ভয় পান না ৫২ বছরের কামরুদ্দিন। গত ২৫ ধরেই এই পেশার সঙ্গে যুক্ত তারা কয়েকজন। তবে ২০২০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত এতো মানুষের মৃত্যু মিছিল একবারে কখনও দেখেছেন কিনা মনে করতে পারছেন না ওই তারা।

এদিন তিনি জানান, করোনায় যেভাবে মানুষ মারা যাচ্ছেন তাতে কবর খোঁড়ার জন্য ২৪ ঘণ্টায় তাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে। গোরস্থানের বাইরে শেষকৃত্যের লম্বা লাইন। অবসর নেওয়ার মতো ফুরসত নেই। শুধু তাই নয়, গত তিন চার মাসে সারাদেশে যেভাবে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে তাতে এখন আর করোনাকে ভয় পান না তারা। সাহসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষের কবরের মাটি খুঁড়ে যাচ্ছেন তারা।

একই অবস্থা রাজধানী দিল্লিতেও। চারিদিকে শুধুই হাহাকার আর মৃত্যু মিছিল। শ্মশান গুলির বাইরে দাহ করার জন্য শবের লাইন। অ্যাম্বুলেন্সগুলি দেহ নামিয়ে দিয়ে ফের ছুটে চলেছে আরও মৃতদেহ নিয়ে আসতে। যেন শ্মশানে লাট পড়েছে মরা পোড়ানোর। এদিকে সুষ্ঠভাবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করারও সময় নেই। কাঠের অভাব। মরা পোড়ানোর জায়গার অভাব। ফলে রাজধানীতে নতুন করে খোঁজা হচ্ছে শবদেহ দাহ করার জায়গা।

এই বিষয়ে কামরুদ্দিন আরও জানিয়েছেন, করোনার কারণে গত একবছর ধরে কোনও ছুটি মেলেনি তাঁদের। তিনি ও তার সহকারী ঘড়ির কাঁটার থেকেও দ্রুত কবর খোঁড়ার কাজ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। এমনকি গত একবছর ধরে তাদের একমাত্র কাজই হল অ্যাম্বুলেন্স থেকে শবদেহগুলি নামিয়ে সেগুলি গোরস্থানে কবর দেওয়া।