বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা চতুর্থ

দূষণ আর অব্যবস্থপনার কারণে অনেক আগেই বসবাসের যোগ্যতা হারিয়েছে দেশের রাজধানী ঢাকা। অনেক সমস্যার সঙ্গী ঢাকা এবারও বাসযোগ্য শহরের তলানীতে স্থান পেয়েছে। বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের নতুন র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। এই তালিকার শেষ দিক থেকে চার নম্বর স্থানে রয়েছে ঢাকা। বিভিন্ন দেশের শহরের ওপর জরিপ চালিয়ে ১৪০টি শহরের র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হয়েছে। এবার এই তালিকায় ৩৩.৫ পয়েন্ট নিয়ে ১৩৭ নম্বরে রয়েছে ঢাকা।

ইউরোপের দেশ নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহর রয়েছে তালিকার সবার উপরে। ২০২১ সালের জরিপ অনুসারে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জাপানের ওসাকা শহর আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, বসবাসযোগ্য শীর্ষ ১০ শহরের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের দুটি, জাপানের দুটি, অস্ট্রেলিয়ার চারটি ও সুইজাল্যান্ডের দুটি রয়েছে।

বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় চতুর্থ অবস্থান রয়েছে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন ও জাপানের টোকিও শহর। একই নম্বর পেয়েছে এই দুই শহর। ষষ্ঠ অবস্থানে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ। সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে সুইজারল্যানন্ডের জুরিখ, জেনেভা এবং অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও ব্রিসবেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে বসবাসযোগ্য শহরের ক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ২০১৮ সাল থেকে। কিন্তু এবার শীর্ষ ১০ শহরের মধ্যে স্থান পায়নি ভিয়েনা। ২০১৯ সালে ভিয়েনার সঙ্গে একই পয়েন্টে নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থান ছিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। সেই মেলবোর্ন এবার আট নম্বরে নেমে এসেছে।

করোনার মোকাবিলায় কোন দেশ কেমন পদক্ষেপ নিয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায়। করোনা মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে এবার নন্দিত হয়েছে নিউজিল্যান্ড। ইআইইউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে নিউজিল্যান্ড কঠোর লকডাউন আরোপ করেছিল। এর ফলে দেশটির অকল্যান্ড, ওয়েলিংটনসহ বিভিন্ন শহরের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়েছে। এসব শহরের মানুষ করোনা–পূর্ববর্তী জীবনে ফিরে যেতে পেরেছে।

ইকোনমিস্ট গত বছর বসবাসযোগ্য শহরের যে র‌্যাঙ্কিং করেছিল, তা বাতিল করা হয়েছিল। এ কারণে সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিং প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। সেই তালিকা অনুসারে বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ছিল ঢাকা। বসবাসযোগ্যতার দিক দিয়ে ওই বছর ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৮তম। এর আগে ২০১৮ সালে অবস্থান ছিল ১৩৯তম। সেই হিসেবে এক ধাপ করে অগ্রগতি হয়েছে ঢাকার।

এবার বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় একেবারে তলানিতে রয়েছে সিরিয়ার দামেস্ক। ১৪০টি শহরের তালিকায় এর অবস্থান ১৪০তম। ১৩৯তম অবস্থানে রয়েছে নাইজেরিয়ার লাগোস। ১৩৮তম অবস্থানে পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোরেসবি। এছাড়া ১৩৬তম অবস্থানে আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স, ১৩৫তম অবস্থানে লিবিয়ার ত্রিপোলি ও ১৩৪তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি।

বসবাসের যোগ্যতার দিক থেকে শহরগুলোর মোট পাঁচটি বিষয়কে সূচকে আমলে নেয়া হয়। এর জন্য মোট ১০০ নম্বর ঠিক করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা পেয়েছে ৩৩ দশমিক ৫ নম্বর। এর মধ্যে শহরের স্থিতিশীলতার দিক থেকে ৫৫, স্বাস্থ্যসেবায় ১৬ দশমিক ৭, সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৩০ দশমিক ৮, শিক্ষায় ৩৩ দশমিক ৩ এবং অবকাঠামোতে ২৬ দশমিক ৮ নম্বর পেয়েছে ঢাকা।

২০১৯ সালে ঢাকা পেয়েছিল ৩৯ দশমিক ২ নম্বর। এর মধ্যে শহরের স্থিতিশীলতার দিক থেকে ৫৫, স্বাস্থ্যসেবায় ২৯ দশমিক ২, সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৪০ দশমিক ৫, শিক্ষায় ৪১ দশমিক ৭ এবং অবকাঠামোতে ২৬ দশমিক ২ নম্বর পেয়েছিল ঢাকা।