নৌকার প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ এমপি ফিরোজের, অডিও ভাইরাল

ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ডেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নৌকার প্রার্থীকে পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক চিপ হুইপ আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, ভাতিজাকে বিজয়ী করতে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির আলী হাওলাদারকে আ স ম ফিরোজ এমপি এ পরামর্শ দেন। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত ৯ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে এমপির এ বক্তব্য নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে।

ওই অডিওতে শোনা যায়, নৌকার প্রার্থী আমির আলীকে আ স ম ফিরোজ বলেন, ভোট যদি একেবারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয় তুমি হবা না।

এ সময় নৌকার প্রার্থী এমপিকে বলেন, শোনেন— ভোট নিরপেক্ষ হলে আমি হব।

এর পর এমপি ফিরোজ অনেকটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, এসব কথাবার্তা আমাকে কইও না। তুমি স্বাস্থ্যগতভাবে ঠিক নেই। লেখাপড়া জানো না। তোমারে একবার সুযোগ দিছিলাম চেয়ারম্যান হইতে পারনি। আলকাস মোল্লা (এমপির ভাতিজা) চেয়ারম্যান হইছে। ও মাস্টার্স পাস করা ছেলে। ওর বউও মাস্টার্স পাস মেয়ে। ওর জন্য চন্দ্রদ্বীপের লোকজনের মধ্যে আনন্দ চলছে।

এ সময় নৌকার পক্ষে এক ব্যক্তি বলেন, হুইপ সাহেবের ভাইয়ের ছেলে বলে তাকে (আলকাস মোল্লাকে) মানুষ ভয় করে।

এ কথা শেষ হতে না হতেই এমপি ফিরোজ উত্তেজিত হয়ে বলেন, এগুলো বলো কেন, বলে আমাকে ছোট করো কেন? নৌকা শেখ হাসিনা তোমাকে দিছে, কিন্তু আলকাস ভালো প্রার্থী। ও (আলকাস) গতবার বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল বলে এ বছর ওকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আমার কাছে ওর সম্পর্কে কোনো বাজে কথা বলো না। আমার কাছে বাজে কথা বললে, জুতা দিয়া পেটাব।

এমপি ফিরোজের এই বক্তব্যের পর নৌকার প্রার্থী আমির আলী বলেন, তা হলে কি আমি ভোট বর্জন করব?

এ সময় আ স ম ফিরোজ বলেন, তুমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। যদি তুমি সম্মান বাঁচাতে চাও তা হলে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটির নেতাকর্মীদের ডাকো। নেত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলবা— আমার স্বাস্থ্য খারাপ, তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাই। যেহেতু আলকাস মোল্লা গতবার নির্বাচিত হইছে, তাই আমি মনে করি উন্নয়নের জন্য তাকে ভোট দেওয়া উচিত।

এমপি আ স ম ফিরোজের এই অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর বাউফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যপক সমালোচনার ঝড় বইছে।

এ ব্যাপারে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমির আলী হাওলাদার বলেন, এমপির বাসায় বসে তার সঙ্গে এ সংক্রান্ত কথাবার্তা হয়েছে। তখন আরও লোকজন ছিল। কে বা কারা সেই কথা রেকর্ড করেছে তা আমি জানি না। আমি নৌকা মার্কা নিয়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে আছি, থাকব এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জিতব ইনশাল্লাহ।

এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে আ স ম ফিরোজ এমপিকে কল দেওয়া হলে তা রিসিভ হয়নি। পাঠানো হয় খুদেবার্তা, তাতেও তিনি সাড়া দেননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানকে বলেন, ইউপি নির্বাচনে পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগ থেকে নৌকার প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কোনো নৌকার প্রার্থীকে আমি না, আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বলতে পারবে না— তুমি অমুকের পক্ষে উইথড্র কর। এমন অধিকার কারও নেই। আমাদের দায়িত্ব হলো— আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীকে জেতানো। আর এ জন্য যা করার সব করব— এটিই আমার পরিষ্কার কথা।