আফগান শরণার্থী শিবির থেকে বিশ্বের প্রভাবশালী নারী ফুটবলার

ইউরোপের নারী ফুটবল অনুসরণ করেন অথচ নাদিয়া নাদিমের নাম শোনেননি, এমন একজনও হয়তো পাওয়া যাবে না। ইউরোপ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আফগান এই নারী ফুটবলার। কিন্তু এখন আর তিনি আফগানি নন, ডেনিস।

ডেনমার্ক জাতীয় নারী দলের হয়ে খেলেন। ক্লাব ফুটবলে খেলেন নেইমারদের ক্লাব পিএসজির হয়ে। এবার ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান (নারীদের) জিতেছেন তিনি।

যদিও পিএসজি ছেড়ে এবারই তিনি যোগ দিয়েছেন আমেরিকান ফুটবল ক্লাব রেসিং লুইসভিলে এফসিতে। ক্লাব ফুটবলে যার নামের পাশে লেখা রয়েছে ২০০ প্লাস গোল, যা নারী ফুটবলে রীতিমতো ইর্ষণীয়।

নাদিয়াকে তাই তারকার চেয়েও কম বলা যায় না। বয়স হয়েছে ৩৩। কিন্তু এখনই তিনি থামতে চান না। এগিয়ে যেতে চান তরতর করে। কারণ, ফুটবলকে বিদায় জানানোর এখনও কোনো ইচ্ছা তার নেই। খেলে যেতে চান, অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।

ডেনমার্ক জাতীয় দলের হয়ে এরই মধ্যে খেলেছেন ৯৮টি ম্যাচ। ভাবা যায়! গোলও করেছেন ৩৮টি।

কিন্তু কেন হঠাৎ আলোচনায় উঠে এলেন আফগান বংশোদ্ভূত এই ডেনিস নারী ফুটবলার? এর পেছনেও রয়েছে একটি তুমুল সংগ্রামী জীবনের গল্প। যার আপাতত সীমানা হচ্ছে, বিশ্বের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ফোর্বস। এই ম্যাগাজিনের মোস্ট পাওয়ারফুল ওমেন ইন ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টসের তালিকায় উঠে এসেছে নাদিয়া নাদিমের নাম।

নাদিয়া নাদিমের জন্ম আফগানিস্তানের হেরাত শহরে। তার বাবা ছিলেন আফগান সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল। ২০০০ সালে তার বয়স ১২ বছর, সে সময় খুব সহজেই হয়তো জীবনটা চলে যেতে পারতো তার। কিন্তু নাদিয়ারা বেঁচে গেলেও, তালেবানদের হাতে নিহত হন নাদিয়ার বাবা! তালেবানরা তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।

এরপরই পুরো পরিবার আফগানিস্তান ছেড়ে শরণার্থী হওয়ার পরিকল্পনা নেয়। ফলে ট্রাকের পিছনে করে নাদিয়ার পরিবার পাড়ি জমায় ডেনমার্কে!

সেখানেই মূলত তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়। শুরুতে বি৫২ আলবোর্গ এবং এরপর টিম ভিবর্গের হয়ে খেলেন। এরপর সেখান থেকে তিনি পাড়ি জমান স্কাই ব্লু এফসিতে। এরপরের গন্তব্য ছিল পিএসজি। সেখান থেকে সর্বশেষ রেসিং লুইসভিলে এফসি। ২০১৮ সালে ম্যানসিটিতেও খেলেছেন তিনি।

২০০৯ সালে নাদিয়ার ডেনমার্ক জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটে। এরপর খেলেছেন ৯৮টি ম্যাচ। নাদিয়া নাদিমের এখন স্বপ্ন হলো, ডেনমার্কের হয়ে শততম ম্যাচ খেলা। এ বছরই সম্ভবত স্বপ্ন পূরণ হবে তার।

শুধু একজন ফুটবলারই নন, নাদিয়া নাদিম একজন ডাক্তারও বটে। তিনি একজন মেডিকেল সার্জন। খেলার পাশাপাশি তিনি এই ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কথা বলতে পারেন মোট ১১টি ভাষায়। যে কারণে ফোর্বসের মোস্ট পাওয়ারফুল ওমেন ইন ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টসের তালিকায় উঠে আসে তার নাম।

নাদিয়া নাদিম এখন একজন সংগ্রামী নারীর রোল মডেল। জীবনে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কীভাবে সাফল্যের শিখরে যেতে হয়, সেটা দেখিয়েছেন নাদিয়া নাদিম। ইউরোপসহ বিশ্বের তরুণ নারীদের স্বপ্নের রানীতে পরিণত হয়েছেন এই আফগান নারী।