এডিসের লার্ভা পেলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ

সর্তক করার পরেও কোন বাড়িতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র বা লার্ভা পাওয়া গেলে এবং সিটি করপোরেশনকে নিয়মতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, একটা জায়গাতে যেখানে লার্ভা পাওয়া গেছে, তাদের সতর্ক করার জন্য জরিমানাও করা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয়বার সেখানে যদি তিনগুণ লার্ভা পাওয়া যায়।

এমনকি সেখানে সিটি করপোরেশনের লোকদের ঢুকতে দিবে না। সিটি করপোরেশনকে নিয়মতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করবে। এগুলোর জন্য আপনারা (মেয়রগণ) ভবিষ্যতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবেন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার (২৫ জুলাই) স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জরুরি ভিত্তিতে মেয়রদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী।

সেখানে উপস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে এই নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের সঞ্চালনায় জরুরি এই সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ প্রমুখ।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস অদৃশ্য, আর এডিস মশা দৃশ্যমান। অদৃশ্য শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে নাও করতে পারি কিন্তু দৃশ্যমান শত্রুর সাথে যুদ্ধে করতে না পারলে সেটা আমাদের ব্যর্থতা।

এটা নিয়ে আমরা ব্যর্থ হতে পারব না। আমি এখানে বসছি দায়িত্ব নিয়েছি, আমাদের মেয়র সাহেবরাও আছেন। আমরা ব্যর্থ হব না। আমরা সফল হব।

মন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু রোগের ঊর্ধ্বমুখী একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার জন্য আমরা ধারাবাহিকভাবে সভা করেছি।

গত ১২ জুলাই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা স্ব স্ব বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু গতকাল ১০৪ জন আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এতে পরিষ্কার এখনো অনেক জায়গায় এডিস মশার প্রজনন অব্যাহত আছে। সেটা আমরা এখনো পুরোপুরি বন্ধ করতে পারিনি।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে যখন মারাত্মক পরিস্থিতি মোকাবিলা করছিলাম এবং ২০২০ সালের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা সম্মিলিত ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। এটা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সেকাল থেকে সিদ্ধান্ত আসলে আমরা জাতীয়ভাবে প্রচার করব।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মেয়রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা কোথায়, কোন কোন এলাকাতে স্প্রে করবেন কোথায় লার্ভিসাইড করবেন, কোথায় ফগিং করবেন এটা আমাদের জানান। আমাদের একটা কন্ট্রোল সেল থাকবে সেখানে তথ্য দিলে আমরা বিষয়টি রিভিউ করতে পারব।

তিনি বলেন, এক আমিও পারবা না, আপনারাও (মেয়রগণ) একা দায়িত্ব পালন করতে গেলে পারবেন না। একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আমরা যদি ভালো থাকতে চাই আমাদের সকলের দায়িত্ব নিতে হবে।

আপনি, আমি চিৎকার করলে লাভ হবে না, আমাদের জনগণকে সচেতন করতে হবে। বাড়ির ছাদে যদি পানি জমিয়ে রাখে, বাড়ির আঙিনাতে যদি পানি জমিয়ে রাখে, ফুলের টবে পানি জমে থাকে তাহলে তো মশার প্রজনন হবেই।

এসময় মন্ত্রী বলেন, একজন আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি বলেছেন আমার বাসা তো পরিষ্কার রাখি তখন বলেছি আপনার পাশের বাসায় হয়তো এডিসের লার্ভা আছে। তখন সে উত্তর দিয়েছে তারা আমার কথা শোনে না। এটাই হচ্ছে সমস্যা। এজন্য সমাজকে যুক্ত করতে হবে, জনগণকে যুক্ত করতে হবে।

একজনের কোন অধিকার নাই আর একজনের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো এমন কিছু করা। রাষ্ট্রে বসবাস করার জন্য সমাজে বসবাস করার জন্য যে দায়বদ্ধতা আছে সেই দায়বদ্ধতার বাইরে আমি যেতে পারব না।

বাসায় মশার প্রজনন করবে সে আক্রান্ত হবে, সে কিছু মনে করবে না। আমি কিছু করি নাই আমি কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবো? পৃথিবীতে বসবাস করতে হলে অনেক প্রতিকূলতা আছে সেগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ১০৪ জন হয়েছে, কাল যদি ৪০০ জন হয়ে যায়? ২০১৯ সালে হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ ছিল, এখন তো আমাদের হাসপাতালে জায়গা নাই। এটা আমাদের বড় মাথা ব্যাথার কারণ। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অবস্থা নাই, আইসিইউ নাই, এরমধ্যে ডেঙ্গু যদি আবার মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাহলে সত্যিকার অর্থে আমাদের দুঃখের শেষ থাকবে না।