আফগানিস্তান ছেড়ে মধ্য এশিয়ায় মার্কিন সৈন্য!

আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশে মোতায়েনের কথা বিবেচনা করছে। তবে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভের এ সম্পর্কিত একটি বিবৃতি গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে।

এক রুশ সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে রিয়াকভ বলেন, গত মাসে জেনেভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকে পুতিন বাইডেনের কাছে মস্কোর উদ্বেগের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে ৯০ শতাংশ মার্কিন সৈন্য ও সরঞ্জামাদি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর মস্কোর পক্ষ থেকে এই উদ্বেগের কথা জানান হয়। বাইডেন বলেছেন, ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক তত্পরতা গুটিয়ে আনা হবে।

বাইডেন জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই জানিয়েছিলেন তিনি ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন করবেন।

সাক্ষাত্কারে রিয়াবকভ বলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থায়ীভাবে মার্কিন সৈন্য রেখে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা সাফ জানিয়ে দিয়েছি এটি করা হলে মধ্য এশিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চলের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী নয় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককেও প্রভাবিত করবে।’ তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকেও রাশিয়ার তরফ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ১২ জুলাই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, কাজখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তান কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের সদস্য। তাই এই অঞ্চলে বিদেশি সৈন্যের উপস্থিতি চুক্তি সংস্থার সদস্যদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে।

তিনি বলেন, এই দেশগুলোর কোনোটিই মার্কিন সৈন্যের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। দেশগুলোর মধ্যে তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তানে রুশ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। কিরগিজস্তানে একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ছিল। আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য সেটি স্থাপন করা হয়, ২০১৪ সালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উজবেকিস্তানেও একটি মার্কিন ঘাঁটি ছিল।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে ২০০৫ সালে সেটি বন্ধ হয়। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চলতি বছর মে মাসে নিশ্চিত করেছে যে সেখানে নতুন করে কোনো দেশের সামরিক ঘাঁটি হবে না, কারণ তাদের সংবিধান সেটি অনুমোদন করে না। লাভরভ বলেন, ‘আমি মনে করি না, মধ্য এশিয়ায় সামরিক ঘাঁটির প্রয়োজনীয়তা আর দেখা দেবে’।

আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার পর প্রতিবেশী উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান বা কাজাখস্তানে তাদের রাখার বিষয়টি বাইডেন প্রশাসন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বলে খবর বেরিয়েছিল। কারণ আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়। তাই যেকোনো পরিস্থিতি দেশটির সরকারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য সৈন্যদের ধারেকাছে রেখে দেওয়ার এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে লাভরভের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে মার্কিন সৈন্যদের ঠাঁই দিয়ে দেশের ভেতর গণঅসন্তোষ বেড়ে ওঠার মতো ঝুঁকি নিতে রাজি হবে। আফগানিস্তানে তালেবানের ক্রমাম্বয়ে শক্তি বৃদ্ধির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি একথা বলেন।

লাভরভ প্রশ্ন রাখেন, ‘আফগানিস্তানে যখন ন্যাটো বাহিনীর ১ লাখের বেশি সৈন্য উপস্থিত ছিল তখনো তারা সেখানে সুবিধা করতে পারেনি। আর এখন আফগান সীমান্তের বাইরে সামান্য সৈন্য রেখে কি অর্জন করতে পারে মার্কিন বাহিনী। তারা সম্ভবত এ অঞ্চলের ওপর নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতেই এটি করতে চাইছে।’

এদিকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও অন্যান্য বিদেশি বাহিনী সরে যাওয়ার পর তালেবান দ্রুত নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেছে। ১৬ জুলাই তারা দাবি করে দেশটির ৮৫ শতাংশ অঞ্চল তাদের দখলে। তালেবান শক্তি সঞ্চয়ে উদ্বিগ্ন রাশিয়া। রাশিয়া মনে করে এর ফলে মধ্য এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

তালেবানের আকস্মিক উত্থানে শত শত আফগান সৈন্য পার্শ্ববর্তী তাজিকিস্তানে পালিয়ে গেছে। দক্ষিণ সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়াতে ২০ হাজার রিজার্ভ সৈন্য তলব করা হয়েছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি তালেবানের একটি উচ্চ পর্যায় প্রতিনিধি দল মস্কো সফর করে।

তারা জানায়, তালেবান রাশিয়া বা মধ্য এশিয়ায় তাদের মিত্রদের জন্য হুমকি হবে না। আফগানিস্তান বিষয়ক রাশিয়ার বিশেষ দূত কাবুলভের সঙ্গে ঐ প্রতিনিধি দলের আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা তালেবানের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেয়েছি তারা মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সীমান্ত অতিক্রম করবে না।