যশোরে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে বঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ ত্যাগী ও দলের জন্য নিবেদিত কর্মীদের বাদ দিয়ে অনুপ্রবেশকারী, রাজাকার- বিএনপি’র পরিবারের সদস্য, বহিরাগত ও অযোগ্যদের অনৈতিকভাবে পদ দেয়া হয়েছে।
উত্তারাধিকারের রাজনীতিতে গুরুত্ব ও মৃত নেতার নাম তালিকায়, দলে নিষিক্রয়কে উচ্চপদ দেয়ার অভিযোগও করেছেন নেতাকর্মীরা।
৯ আগষ্ট সোমবার প্রেস ক্লাব যশোরে সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন সদ্য ঘোষিত জেলা আওয়ামী লীগের পূনাঙ্গ কমিটিতে পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীরা।
সাবেক ছাত্রলীগের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করা হলেও উপস্থিত ছিলেন ১৯ বছর ধরে চলমান জেলা যুবলীগের বর্তমান নেতাকর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনে নেতাকর্মীরা কমিটি পুনর্গঠনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান।
নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৯ সালে ২৭ নভেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগা মাঠে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে শহীদুল ইসলাম মিলনকে সভাপতি ও শাহীন চাকলাদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ২২ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেই ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের ২০ মাস পর গেল ৩০ জুলাই যশোর জেলা আওয়ামী লীগের ৯৪ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৯ জন উপদেষ্টাসহ ৯৪ সদস্যের এই কমিটি অনুমোদন দেন। কমিটি ঘোষণার পর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, সদ্য ঘোাষিত জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে আশরাফুল কবির বিপুল ফারাজী। যিনি ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগদান করে এখন জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করেছেন।
কমিটির ২৩ নম্বর সদস্য অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন। ওনি যশোরের রাজনীতির সাথে কোন সংপৃক্ত না।
বর্তমান যশোরে রাজনীতি করে এমন কোন ব্যক্তিই তাকে চিনে না। ৩২ নম্বর সদস্য অমিত কুমার বসু। যশোরের চৌগাছায় বাড়ি হলেও তিনি থাকেন ঢাকাতে। তিনিও যশোরের রাজনীতি সাথে যুক্ত নেই।
কমিটির উপ দপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার। তিনি শার্শা উপজেলার জামায়াত পরিবারের সদস্য। জামায়াত পরিবারের সদস্য হয়েও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন মঈনুল আলম টুলু।
তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শান্তি কমিটির সদ্য এবং সাবেক ধর্ম মন্ত্রী নাজিম উদ্দিন আল আজাদের ভাই। বিএনপির অনুপ্রবেশকারী ২৫ নম্বর সদস্য মশিউর রহমান সাগর। তিনিও কমিটিতে স্থান পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার বন্ধু হওয়ার সুবাদে ।
শীর্ষনেতা কাকে বোঝাতে চাইছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি। দীর্ঘদিন ধরে খুলনা বিভাগীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বরত নেতা ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হোসেনের বাড়িতে কেয়ার টেকার হিসাবে কাজ করছেন ঝিকরগাছা উপজেলার আলামুন ইসলাম পিপুল।
তিনিও স্থান পেয়েছেন জেলা কমিটির ৩১ নম্বর সদস্য হিসাবে। যারা রাজনীতির সাথে সংপৃক্ত নাই তেমনি দেলোয়ার হোসেন দীপু হয়েছেন ২১ নম্বর সদস্য, সাইফুদ্দিন সাইফ হয়েছেন বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং বির্তকিত ব্যক্তি গোলাম মোস্তফা।
এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলে সামির হোসেন পিয়াস যে কিনা ছাত্রলীগ, যুবলীগ করেনি। খুবই অল্প বয়সে হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, মেহেদী হাসান মিন্টু সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। তিনি পরাজিত হন। অনৈতিকভাবে তাকে জেলা কমিটির সহ-সভাপতি করা হয়েছে। লুৎফুল কবীর বিজু শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন।
তিনিও পরাজিত হন। তাকে অনৈতিকভাবে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দেয়া হয়েছে। আবার দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আবুল হোসেন। তাকে জেলা কমিটিতে পদ দেয়া হয়নি।
তার মত অনেক ত্যাগী ও রাজপথে পরীক্ষিত ছাত্র ও যুব নেতারা পদ বঞ্চিত হয়েছে। তাদেরকে কমিটিতে না রেখে তাদের সারাজীবনের রাজনীতির কবর রচনা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যুবলীগের সহ সভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং বিভিন্ন যারা বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে জড়িত তারা এই কমিটিতে স্থান পায়নি।
পেয়েছেন য়ারা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দলে কোনও অবদান না থাকার পরেও অজ্ঞাত কারণে জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ দেওয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সুবিধাবাদী, হাইব্রিডরা স্থান পেয়েছেন।
কেউ কেউ সুযোগ পেয়েছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের ম্যানেজ করে। তারা এ কমিটি থেকে বিতর্কিত, হাইব্রিড ও দলে নিষিক্রদের সরিয়ে ত্যাগী ও বঞ্চিত অন্তর্ভুক্ত করতে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় তারাই এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন।
কোনো বিতর্কিত ব্যক্তির এই কমিটিতে জায়গা হয়নি। নতুন কোন কমিটি দিলে কিছু বাদ পড়বে কিছু নতুন ঢুকবে এটাই স্বাভাবিক। কেন্দ্র থেকে যে কমিটি দেওয়া হয়েছে; তা নিয়েই আমরা দলীয় কার্যক্রম করে যাচ্ছি। সবমিলে কমিটি ভাল হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, আজহার হোসেন স্বপন, দপ্তর সম্পাদক হাফিজুর রহমান, যুবলীগ নেতা কামরুজ্জামান চৌধুরী, মারুফ হোসেন বিপুল, শেখ নেছার আহমেদ, আসাদুজ্জামান আসাদ, প্রদীপ রায়, আমিরুল ইসলাম দুঃখী, শান-ই-শাকিলা আফরোজ এ্যানী।