মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র লড়াইয়ে নারীরা

মিয়ানমারে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলদারি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই-সংগ্রাম ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এই লড়াইয়ে ব্যাপক হারে যোগ দিচ্ছেন দেশটির নারীরা।

একটাই লক্ষ্য- স্বৈরশাসন অবসান এবং নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা। সেই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই গভীর জঙ্গলে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা।

শুধু নারীদের নিয়ে বিশেষ একটি গ্রুপ গড়ে তোলা হয়েছে। মিয়ানমারে চলতি বছরের শুরুর দিকে (পহেলা ফেব্রুয়ারি) এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার দখল নেয় সেনাবাহিনী। আটক করা হয় দেশটির নেত্রী অং সান সু চিসহ বেসামরিক সরকারের নেতাদের।

এরপর সেনাশাসনের প্রতিবাদ এবং সু চিসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে রাজপথে নামে দেশটির মানুষ। অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ ও প্রতিরোধযুদ্ধে এখন পর্যন্ত দেশটিতে এক হাজার ১০০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া আট হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পর্যবেক্ষণকারী দল দ্য অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস।

শুরু থেকেই জান্তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। সম্প্রতি গোষ্ঠীগুলোর প্রতিরোধ লড়াই জোরদার হয়েছে। মিয়ানমারের মান্দালয়, ইয়াঙ্গুন, সাগাইং, মাগউই, এয়ারবতিসহ বিভিন্ন শহর এবং কায়াহ ও শান রাজ্যে প্রায়ই জান্তা সেনাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই হচ্ছে।

এসব হামলা-সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত শতাধিক সেনা নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে আলজাজিরা জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চলমান এই লড়াইয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিচ্ছেন নারীরা বিশেষ করে তরুণীরা।

এরা গ্রাম ও শহরের স্বাভাবিক জীবন ছেড়ে গহিন জঙ্গলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এমন বহু নারীর একজন হচ্ছেন সাগাইং রাজ্যের কাব্য মে।

মাত্র ২৩ বছর বয়সি এই নারী কয়েক মাস আগেও শিক্ষকতা করতেন। এখন তিনি পুরোদস্তুর একজন যোদ্ধা। শুধু নারীদের নিয়ে গঠিত ‘ময়াং উইমেন ওয়ারিয়রস’ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য তিনি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার কারণও জানিয়েছেন কাব্য। তিনি বলেন, ‘আমি যুদ্ধে যোগ দিয়েছি, কারণ ওই কুকুরগুলোর শিকড় উপড়ে ফেলতে চাই।’

কুকুর বলতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে বুঝিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সশস্ত্র নারী দলে যোগ দেওয়ার আরও একটা কারণ, আমি দেখাতে চাই যে, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কিছু করতে পারে।’

সু চিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ : ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের প্রধান অং সান সু চিসহ ১৬ নেতার বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়। গত বছরের নভেম্বরে (২০২০) দেশটির সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

ওই নির্বাচনে সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি বিশাল জয় পায়। ওই নির্বাচনে সু চি, সাবেক প্রেসিডেন্ট উ উইন মিন্ট ও সাবেক নির্বাচন কমিশনের প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতি ও আইনবহির্ভূত কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট মিয়ানমার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ৬০ বছরের বেশি বয়সি ভোটারদের অগ্রিম ভোট দেওয়া এবং ব্যালটে ভোট দেওয়ার অধিকার নেই এমন লোকদের নাম অন্তর্ভুক্তসহ বেশ কয়েকটি নির্বাচনি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে এই ১৬ জনের বিরুদ্ধে।

সামরিক জান্তা সরকার বলছে, নির্বাচনে জালিয়াতির কারণে তাদের ক্ষমতা গ্রহণ করাটা জরুরি ছিল। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে এমন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো বলছে, স্বাধীন ও অবাধ নির্বাচন হয়েছে। মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বেশির ভাগ সময়ই দেশটি শাসন করেছে সেনাবাহিনী।