ভারতে জিকা ভাইরাস, ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনও অনিয়ন্ত্রিত ডেঙ্গু। এরই মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতে জিকা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ১০০ বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে সে দেশে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের ভয়াবহ ঝুঁকির শঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, এডিস মশা জিকা ভাইরাসের বাহক। সেই একই মশা ডেঙ্গু ছড়ায়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ছাড়া দেশের অন্য কোনো হাসপাতালে জিকা শনাক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই করোনা ও ডেঙ্গুর ব্যাপকতার মধ্যে দেশে জিকা ভাইরাস দেখা দিলে মহাবিপদ দেখা দেবে।

জিকা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির দেহে ছড়ায়। তাই ভারতে ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে জিকা ভাইরাস দেশে আসার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ব্রাজিলে জিকা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে মহামারি ঘোষণা করে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থা জারি করেছিল।

২০১৩ সালে সিলেটে জিকার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। তখন স্বাস্থ্য বিভাগে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তখন বিমানবন্দর, নৌ-বন্দর, স্থলবন্দরসহ বৈদেশিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় কড়া নজরদারির ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে এরপর এ বিষয়ে আর কোনো দৃশ্যমান সতর্কতা চোখে পড়েনি।

চিকিৎসকরা বলছেন, উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, এই ভাইরাস প্রতিরোধে এখনও টিকা বা ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। যেহেতু এই রোগ মশাবাহিত, তাই এর প্রাদুর্ভাব রোধ করতে অবিলম্বে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। সেইসঙ্গে কারও শরীরে লাল লাল বিন্দু দেখা দিলে, জ্বর জ্বর ভাব, মাথা ব্যথা,

পেশীতে যন্ত্রণা, বমি ভাবের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, জিকা ভাইরাসের ঝুঁকি অবশ্যই রয়েছে।

ভারতে যে সময় এই রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে, ঠিক সেই সময় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সব ধরনের ভ্রমণ ভিসা চালু হয়েছে। এটা অবশ্যই উদ্বেগের। এখনই যদি স্বাস্থ্য বিভাগ সর্তক না হয়, সামনে মহা বিপদ অপেক্ষা করছে। দেশে করোনা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে। এর মধ্যে জিকা ভাইরাস দেখা দিলে সামাল দেয়া কষ্ট হয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি কোনো কাজে আসে না জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, মহামারি করোনা ও ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি দেখিছি। তারা মুখে প্রস্তুতির কথা বললেও বাস্তবে তেমন কিছু চোখে পড়ে না।

তিনি আরও বলেন, শহর-গ্রামগুলোয় এডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে এই ভাইরাস যদি বাংলাদেশে আসে, তাহলে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। প্রতিবেশী নেপালেও এটি দেখা দেয়ায় বাংলাদেশ বড় ঝুঁকিতে।

বিমানবন্দরে জিকা ভাইরাস শনাক্তকরণ স্ক্যানিং মেশিন বসানোর আহ্বান জানান এই বিশেষজ্ঞ। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, দেশে প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয় ২০১৩ সালে। এরপর এমন কোনো কেস পাওয়া যায়নি।

প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হচ্ছে। বিমান বন্দরে স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতে এই ভাইরাস উদ্বেগজনক হারে বাড়লেও আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ঝুঁকি দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘ভারতে এর আগেও একবার জিকা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল।

তখনও আমরা এ বিষয়ে সর্তক ছিলাম। আর যেহেতু এই ভাইরাস এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়, তাই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে জিকা পরীক্ষারও ব্যবস্থা রয়েছে। ২০১৩ সালের পর এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের অস্তিত্ব এখানে পাওয়া যায়নি। তবে আইইডিসিআর এ বিষয়ে সর্তক অবস্থানে রয়েছে।

যদি জিকা ভাইরাসে নমুনা কারও দেহে শনাক্ত হয়, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইইডিসিআর এ বিষয়ে সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। এ বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণও দেয়া রয়েছে। সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি জানান, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সহজে মারা যায় না।

তবে সমস্যা হলো ৯৫ শতাংশ মানুষ উপসর্গ ছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আর একটি বড় সমস্যা হলো, এই ভাইরাসে যদি গর্ভবর্তী মা আক্রান্ত হন, তাহলে নবজাতকের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, মাথার আকার ছোট হয়ে যায়। তবে আশার বিষয়, এখনও এখানে গত পাঁচ/ছয় বছরে কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।

জিকা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল উগান্ডায় ১৯৪৭ সালে। এটি প্রথম পাওয়া যায় এক প্রজাতির বানরের দেহে। ১৯৫৪ সালে মানবদেহে এটি প্রথম শনাক্ত হয়েছিল নাইজেরিয়ায়। এরপর আফ্রিকাসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের কিছু দ্বীপে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব হয়েছে ২০১৫ সালে ব্রাজিলে। সূত্র: নিউজবাংলা