জলবায়ু ক্ষতিপূরণ ত্বরান্বিত হওয়া বড় প্রাপ্তি: প্রধানমন্ত্রী

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়সহ জলবায়ু অর্থায়ন-প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের একমত হওয়াকে এবারের জলবায়ু সম্মেলনের বড় প্রাপ্তি বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো, লন্ডন ও ফ্রান্সের প্যারিসে সাম্প্রতিক সফর নিয়ে বুধবার বিকেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মত দেন। সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন প্রান্ত থেকে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। আর সংবাদকর্মীরা যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হল থেকে।

শেখ হাসিনা বলেন, এবারের কপ সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি হচ্ছে বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা প্যারিস চুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়সহ জলবায়ু অর্থায়ন-প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে একমত হন।

বাংলাদেশসহ ১৪১টি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের অরণ্য নিধন রোধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। বাংলাদেশের নেতৃত্বে ৪৮টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের ‘ঢাকা-গ্লাসগো ডিক্লারেশন’ গ্রহণ করাকে জলবায়ু কূটনীতিতে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি সম্প্রতি তাদের একটি প্রতিবেদনে আমাকে কপ-২৬ সম্মেলনের ৫ জন শীর্ষ ডিল মেকারের একজন হিসেবে চিহ্নিত করে। একে আমি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন, আমাদের নৈতিক পররাষ্ট্রনীতির প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা হিসেবে বিবেচনা করে সম্মানিত বোধ করি।

প্যারিস সফরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ নানা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে নিয়মিত কূটনৈতিক সংলাপ শুরু করার জন্য আমি প্রেসিডেন্ট মাখোঁকে প্রস্তাব করি। তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট মাখোঁ প্রতিরক্ষা, অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতে দুই দেশের কার্যক্রম বাড়ানোর ব্যাপারে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।

প্যারিস সফরকালে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে একটি সম্মতিপত্র সই হয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময়ের বিষয়ে সম্মত হয়েছি।

কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় ২০ কোটি ইউরো সহায়তা, টেকসই পানি সঞ্চালন ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রকল্পে ১৩ কোটি ইউরো সহায়তা এবং বিমান চলাচল খাতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ প্রদানসংক্রান্ত আলাদা তিনটি চুক্তি সইয়ের কথাও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, কোভ্যাক্সের আওতায় ফ্রান্স বাংলাদেশকে ২০ লাখ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ফ্রান্সের ব্যবসায়ীদের সংগঠন মুভমেন্ট অফ দ্য এন্টারপ্রাইজ অফ ফ্রান্সের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।