এ অগ্রযাত্রা যেন ব্যাহত না হয়: প্রধানমন্ত্রী

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ অগ্রযাত্রা যেন ব্যাহত না হয়।

রোববার ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারদের সংবর্ধনা দেয়া এবং ২০২০-২০২১ সালের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ শান্তিকালীন পদক দেয়া অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত এ সংবর্ধনা দেওয়া অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আজকে এ সশস্ত্র বাহিনী দিবসে আমি এইটুকুই চাই যে আমাদের এ দেশের অগ্রযাত্রা যেন কোনো রকম ব্যাহত না হয়।

বাংলাদেশ যেন সারা বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে। প্রতিটি বাঙালি পৃথিবীর যেখানে যাবে মাথা উঁচু করে গর্ব ভরে বলতে পারবে যে আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা উন্নত জাতি।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের নিজেদের দেশকে গড়ে তুলেছি একটা সম্মানজনক অবস্থানে। সেইটুকুই আমাদের আকাঙ্ক্ষা, সেইটুকুই আমাদের কামনা।

বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করেছে মন্তব্য করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য শুধু সশস্ত্র বাহিনী না আমি প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি।

যার ফলে আজকে আমরা এটুকু দাবি করতে পারি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমানতালে পা মিলিয়ে চলতে পারে সেই সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক যারা, তারা যদি শিক্ষা, দীক্ষা, প্রশিক্ষণে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন না হয়, তাহলে বাংলাদেশের মর্যাদাও কখনো উন্নত হবে না।

বাংলাদেশের জনগণ যাদের জন্য জাতির পিতা সারাজীবন ত্যাগ শিকার করেছিলেন। তাদের ভাগ্য আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।

জনগণের কল্যাণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ কর্মসূচিগুলো শহর কেন্দ্রিক না, একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত। তৃণমূলের মানুষ যাতে সুফল পায়। সেই পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।

৭৫ পরবর্তী সময়ে ইতিহাস বিকৃতি এবং মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের ওপর আঘাতের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর এদেশে এমন একটা সময় এসেছিল যখন যারা মুক্তিযোদ্ধা তারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে ভয় পেত, তারা পরিচয় দিতে পারতো না।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল। একটা মনগড়া ইতিহাস চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। আমি জানি না ঠিক পৃথিবীর কোনো দেশে কখনো এ ধরনের নিজেদের এ বিজয়ের গাথা কখনো বিকৃত করা হয়, এটা পৃথিবীর কোনো দেশে করা হয় না।

কিন্তু সেই ধরনের একটা জঘন্য কাজ আমাদের দেশে করা হয়েছিল। কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ভিডিপিসহ প্রতিটি স্তরের মানুষ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে, জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যার ফলে শুধু করোনা ভাইরাস মোকাবিলা না, যে কোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক যেটাই আসুক না কেন আমরা তা মোকাবিলা করার সক্ষমতা অর্জন করেছি।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ শান্তিকালীন পদক ও সম্মানী চেক এবং উপহার তুলে দেন।

দিবসটি উপলক্ষে শেখ হাসিনা বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং সশস্ত্র বাহিনীর খেতাব প্রাপ্ত ও খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের মধ্যে উপহার দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে তিন বাহিনী প্রধানসহ সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নিকট আত্মীয়সহ প্রায় ৭৫ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীরা সংবর্ধনায় যোগ দেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কর্মসূচির শুরুতে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। প্রতি বছর দিনটিকে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।