স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সংসদে প্রস্তাব গৃহীত

vabon

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদের সাধারণ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। ১৪৭ বিধিতে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার উত্থাপিত প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়।

এর আগে প্রস্তাবটির ওপর প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধী দল এবং বিএনপির সংসদ সদস্যরা দু’দিনব্যাপী বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন। এতে ৫৯ জন সংসদ সদস্য ১০ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট আলোচনা করেন।

আলোচনা শেষে স্পিকার প্রস্তাবটি সংসদে ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সংসদে প্রস্তাব আনেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। পরে তিনি প্রস্তাবের ওপর নিজেই বক্তব্য দিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটান। এর আগে ওইদিন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদের স্মারক বক্তৃতা দেন।

সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশের ৫০ বছরের অর্জন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অর্জন তুলে ধরেন।

এ সময় বিরোধীদল জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের সদস্যরা বর্তমান সরকারের বেশকিছু কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন। আলোচনায় তারা জাতীয় ঐক্যমত্যের কথাও বলেন।

সংসদে পাস হওয়া প্রধানমন্ত্রীর উত্থাপিত প্রস্তাবটি ছিল- অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ আজ এক ‘উন্নয়ন বিস্ময়’। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ থেকে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন,

৬৬ এর ছয় দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চ গণহত্যা, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা,

১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে ৩০ লাখ মহান শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ পাক সেনাদের আত্মসমর্পনের মধ্যদিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মুক্তির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৩০ লাখ মহান শহীদ, আত্মত্যাগী ২ লাখ মা-বোন, সকল বীরমুক্তিযোদ্ধা,

জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর জাতির পিতা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবার জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নকালে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ জাতীয় জীবনে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

কারাগারের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, সংবিধানকে সামরিক ফরমান দ্বারা ক্ষত-বিক্ষত করা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ধ্বংস করার মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে ভূ-লুণ্ঠিত করা হয়।

১৭ মে ১৯৮১ সালে নির্বাসন শেষে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতিরূপে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, এদেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করি এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা হয়। ২০২১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশরূপে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ২০০৮ সালের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা।

দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, গৃহহীন ৯ লাখ মানুষকে ঘর তৈরি করে দেওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম, নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা,

শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধসহ মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জিত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ প্রতিটি সূচকে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম।

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার লক্ষ্যে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। করোনা অতিমারির সংকট উত্তরণে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির চালিকাশক্তি সচল রেখেছে। মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্ণফুলী টানেলসহ স্বঅর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ বিশ্বে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বাংলাদেশের সফলতার জয়যাত্রায় যুক্ত করেছে অনন্য মাইলফলক।

সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্খার সফল বাস্তবায়ন ও প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনের এই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে তারুণ্যদীপ্ত বাংলাদেশ সকল চ্যালেঞ্জ উত্তরণ ঘটিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণ ও বৈষম্যহীন, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ– জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলারূপে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হোক– এই হোক আমাদের প্রত্যয়।