লঞ্চের ইঞ্জিনে সমস্যা পেয়েছে তদন্ত কমিটি

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা সুগন্ধা নদীতে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরীক্ষা করে ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল বলে জেনেছেন। তবে কী ধরনের সমস্যা ছিল, সেটা তাঁরা প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানাবেন।

অগ্নিকাণ্ডে ৩৮ জনের মৃত্যু এবং অনেকের নিখোঁজ থাকার ঘটনায় ঝালকাঠি থানায় গতকাল শনিবার একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

লঞ্চটি অগ্নিকুণ্ড হয়ে নদীর যে তীরে থামে, সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের সেই দিয়াকুলের গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দুপুরে মামলাটি করেছেন।

ঝালকাঠি থানার ওসি খলিলুর রহমান জানান, মামলাটি তদন্তের জন্য ঝালকাঠি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নজরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি তদন্তকাজ শুরু করেছেন।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তোফায়েল হাসানের নেতৃত্বে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাত সদস্যের তদন্তদল গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ঝালকাঠির লঞ্চঘাট এলাকায় এসে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি খতিয়ে দেখে।

লঞ্চের ইঞ্জিন রুমসহ বিভিন্ন কক্ষে ঢুকে তদন্ত করছে তারা। তদন্তদলটির সঙ্গে ছিলেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী মো. শাজাহান খান। তিনি বলেন, ঘটনার বিষয়ে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে।

কমিটি রিপোর্ট দিলে আমরা জানতে পারব দুর্ঘটনার আসল কারণ। যারা এর জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইন গত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, এটা দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কিছু সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক যুগ্ম সচিব তোফায়েল ইসলাম গতকাল দুপুরে ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পুড়ে যাওয়া জাহাজ এবং দুটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ইঞ্জিনের কিছু সমস্যা আমরা পেয়েছি। সেটা কী এবং সেটার সঙ্গে কী কারণে কী হয়েছে তার যোগসূত্র দেখতে হবে।

তোফায়েল ইসলাম বলেন, আমাদের যে অভিজ্ঞতা হলো, সেগুলো কাজে লাগিয়ে বলতে পারব কী কারণে এ ঘটনা ঘটল। আমরা কিছু ধারণা নিয়েছি, সবাই একত্রে বসে সিদ্ধান্তে আসব।

তিনি বলেন, কমিটি গঠনের পর আজই আমরা ঢাকা থেকে এখানে এসেছি। আমাদের হাসপাতালে ও বরগুনা যেতে হবে এবং আরো অনেকের সঙ্গে কথা বলাও প্রয়োজন।

সব মিলিয়ে যথাযময়ে যথাযথ একটি রিপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করব। তোফায়েল ইসলাম বলেন, চালক ছিল কি ছিল না, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ছিল নাকি ছিল না, সেটা আমরা দেখছি।

কমিটির প্রতিবেদনেই সব কিছু উল্লেখ করা হবে। ঘাটের কাগজপত্রে লঞ্চে ৩১০ জনের মতো যাত্রীর কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে যাত্রী তার চেয়ে বেশি ছিল। এসব খতিয়ে দেখব।

যাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম যে স্থানে জাহাজটি গিয়েছিল, সেখানকার মেম্বার এবং ঘাটে লাগার পর যারা উদ্ধারকাজে লেগেছিল তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।

লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কাউকে পাইনি; মাস্টার ও সারেংয়ের ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো বন্ধ রয়েছে। আর মালিকের মোবাইল নম্বরও বন্ধ পেয়েছি।

কমিটির সদস্যরা লঞ্চটি পরীক্ষা করার সময় অন্য লঞ্চের চালকদেরও সহায়তা নেন। তাঁদের একজন জানান, ইঞ্জিনের সিলিন্ডারের হেডের ফায়ারিং কর্ডে সমস্যা দেখা গেছে।

সিলিন্ডারের হেডে প্রচুর হিট হয়, আর ওভার হিটের সময় সেখান থেকে কোনোভাবে আগুনের ফুলকি বের হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এ ধরনের সমস্যা দেখার জন্য ড্রাইভার-গ্রিজারদের সেখানে থাকার কথা।

মিটারের পাশাপাশি শব্দের মাধ্যমেও সমস্যা বোঝা সম্ভব। সঙ্গে সঙ্গে সমস্যার সামাধান করতে না পারলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ইঞ্জিন কক্ষ থেকেই আগুন লাগে।

আমরা যেভাবে অক্সিজেন গ্রহণ করে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দিই, তেমনি লঞ্চেও একটি ইঞ্জিন রয়েছে, যেটি বাইরে ধোঁয়া ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু এটা যখন আটকে পড়ে, তখন বিস্ফোরণ ঘটে। আমাদের প্রাথমিক ধারণা, ইঞ্জিন কক্ষ থেকেই আগুন লেগেছে। সূত্র: কালের কণ্ঠ।