নারী সেজে কিশোরীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ

নারী কবিরাজ সেজে নানা রোগের কথিত চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন তিনি। তাই মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকা এক কিশোরীকে তার কাছে নিয়ে যান মা-বাবা। তিনি জানান, প্রতি শনি ও মঙ্গলবার রাতে রোগীকে তার বাসায় থাকতে হবে। তার পোষা জিন চিকিৎসা দেবে। মেয়েটির অভিভাবক তাতে রাজি হন।

এভাবে প্রায় দেড় বছর ‘চিকিৎসা’ হলেও রোগ আর সারেনি। বরং একপর্যায়ে প্রকাশ্যে আসে, এতদিন চিকিৎসার নামে কিশোরীকে অচেতন করে ধর্ষণ করে আসছিলেন তিনি। তবে নিজেকে নারী দাবি করে তিনি সেই অভিযোগ খণ্ডানোর চেষ্টা চালান।

এ ঘটনায় করা মামলায় জামিনও মেলে তার। কিন্তু পুলিশের তদন্ত ও ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা যায়, তিনি আসলে পুরুষ। মেয়েটিও ধর্ষণের শিকার। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায়।

কামরাঙ্গীরচর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সিকদার মহিতুল আলম সমকালকে বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর আবদুল মান্নানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে ভুক্তভোগী পরিবার প্রথমে বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলেনি। বরং অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের ফাঁদেই ধরা পড়েছেন।

একদিন তিনি থানায় এসে অভিযোগ করেন, ওই কিশোরী তার স্ত্রী ও তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তার অভিযোগ তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে- মান্নান এলাকায় অ্যানি জাহান নামে পরিচিত। সবাই তাকে নারী হিসেবেই চেনেন। এরপর বেরিয়ে আসে ধর্ষণের কাহিনি। তদন্তে বাদীর অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।

মামলার বাদী ভুক্তভোগীর মা জানান, নানির মৃত্যুর পর লাশ দেখে ভয় পায় তার ১৪ বছরের মেয়ে। তখন থেকে তার আচরণ অস্বাভাবিক হতে শুরু করে। প্রতিবেশীদের পরামর্শে কামরাঙ্গীরচরের খলিফাঘাট এলাকার কবিরাজ অ্যানি জাহানের কাছে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে কবিরাজ জানান, কিশোরীর ওপর জিনের আসর পড়েছে। জিন ছাড়াতে হলে তার বাসায় রাতে থাকতে হবে। সরল বিশ্বাসে মেয়েকে তার কাছে রেখে চলে আসেন মা-বাবা। পরদিন সকালে মেয়ের শরীরে আঁচড়ের দাগ দেখে তারা কারণ জানতে চান। কবিরাজ ব্যাখ্যা দেন, রাতে জিন তাকে আঁচড় দিয়েছে।

এভাবেই সময় গড়াতে থাকে। কবিরাজের নির্দেশে কিশোরী তাকে মা বলে ডাকতে শুরু করে। দুই পরিবারের মধ্যে গড়ে ওঠে ভালো সম্পর্ক। চলতি বছরের জুনে মেয়েটির পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে সিলেটে যান অ্যানি।

সেখানে হোটেলে কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি বুঝতে পারেন। তখন তাকে হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। ঢাকায় আসার পর কিশোরীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেন মান্নান। এর সপক্ষে তিনি বিয়ের কাগজপত্রও দেখান। পুলিশ যাচাই করে দেখেছে, সেগুলো জাল।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা জানান, এ ঘটনায় ১৫ জুলাই মামলা করে ভুক্তভোগী পরিবার। গ্রেপ্তারের পর আবার নিজেকে নারী হিসেবে দাবি করেন মান্নান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়।

তাতে দেখা যায়, মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মান্নান নিজেকে কখনও নারী, কখনও তৃতীয় লিঙ্গের দাবি করে আদালত থেকে জামিন নেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মান্নানের এক্স-রে ও আলট্রাসনো গ্রাম করায়। তাতে তার শারীরিক গড়ন পুরুষের বলে মত দেয়া হয়।

পাশাপাশি তার ক্রোমোজোম পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নমুনা দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এই প্রতিবেদন পাওয়ার আশা করছে পুলিশ।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ, ভুক্তভোগীর জবানবন্দি ও ডাক্তারি পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে- মান্নান আসলে একজন পুরুষ।

তিনি নারী সেজে কিশোরীকে অচেতন করে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী সকল ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানুয়ারিতে এ মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।

এদিকে জামিনে থাকা মান্নান ওরফে অ্যানি এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। তার ছোট ভাই মো. হান্নান দাবি করেন, তার ভাই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। সূত্র: সমকাল।