ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগে সমতা চায় টিআইবি

tib

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুযোগ চায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলদেশ। একইসঙ্গে এই আইন সংশোধনের কমিটিতে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি রাখার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

শুক্রবার ৩১ ডিসেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় টিআইবি। এতে উল্লেখ করা হয়- বিলম্বে হলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের ঘটনা স্বীকার করে আইনটির নিবর্তনমূলক ধারাসমূহ সংশোধনীর বিষয়ে আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যকে সতর্ক সাধুবাদ জানাচ্ছে টিআইবি।

একইসঙ্গে এই বক্তব্যের কার্যকর বাস্তবায়ন দেখতে নিবর্তনমূলক এই আইনটি মানবাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি-না, তা পর্যালোচনা ও সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটিতে গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

এছাড়া আইনের চোখে সবাই সমান এই নীতির কার্যকারিতা নিশ্চিতে শুধু সাংবাদিক নয়, দেশের সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার না করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার ও দুর্ব্যবহার হয়েছে বলে স্বীকার করে বিশ্বের সেরা চর্চাসমূহ অনুসরণ করে আইনের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী।

ভিন্নমত, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করে আইনের এমন ধারাসমূহের পর্যালোচনা করে সংশোধনী করার ব্যাপারে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকে অবশেষে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হিসেবে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের শুরু থেকেই এই আইনটির বেশ কিছু ধারা বিশেষ করে ২৫ ও ৩১ নিয়ে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল।

মুক্ত চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এটি খড়গহস্ত হবার শঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছিল, কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি। এটির অপব্যবহার রোধে আইনমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেটিরও বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি। বরং অল্প দিনেই আইনটি ভিন্নমত দমন ও ভয়ের পরিবেশ তৈরির কার্যকর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও সরকারের প্রশাসন যন্ত্রের কাছে।

এমন বাস্তবতায় আইনটির অপব্যবহার রোধে যে কোনো ধরনের সংশোধনে গঠিত কমিটিতে সব অংশীজন, বিশেষ করে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। নয়তো নতুন উদ্যোগটিও ভেস্তে যাবার শঙ্কা মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলে সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হবে না- এমন সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলেও অন্তর্ভুক্তিমূলক নয় উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আর্টিকেল নাইনটিনের তথ্যানুযায়ী, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২১ সালের ১১ মাসে মামলা হয়েছে ২২৫টি, যেখানে ৪‘শর বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এরমধ্যে ১৬৬ জনকেই আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার এসব মামলার বড় অংশই হয়েছে ক্ষমতাসীনদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটুক্তির জন্য।

অর্থাৎ আইনটি শুধু গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধই নয়, সাধারণ নাগরিকের ভিন্নচিন্তা ও সরকারের সমালোচনা রোধে ব্যবহারের সুস্পষ্ট নজির তৈরি করেছে।

যার বড় উদাহরণ এই আইনের মামলায় কারাগারে থাকা লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু। সুতরাং শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারের নীতি থেকে সরে আসতে হবে।

একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার না করার যে সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর আলোচনার পর মৌখিকভাবে থানাগুলোতে জানানো হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে, তা অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার ও সবার জন্য সমানভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।