অস্ত্র হিসেবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ কার্যকর কোনো পন্থা নয়

জাতিসংঘ যখন বিভিন্ন দেশকে শাস্তি দেয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা নামক অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে তখন এ সংস্থার উপ মহাসচিব এ কথা স্বীকার করেছেন যে অস্ত্র হিসেবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ আসলে কার্যকর কোনো পন্থা নয়।

রোজম্যারি দি কারলো বলেছেন, রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের অংশ হিসেবে নিষেধাজ্ঞার অপশন রাখা উচিত যাতে সংলাপ ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়।

জাতিসংঘের উপ মহাসচিব এমন সময় নিষেধাজ্ঞা নীতির সমালোচনা করলেন যখন এই সংস্থা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব সংঘাত অবসানের অজুহাতে লিবিয়া, সুদান, মালি ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।

যদিও জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা আরোপের উদ্দেশ্য ওই দেশগুলোর সরকারের নীতি বা আচরণে পরিবর্তন আনার দাবি করে থাকে এবং এটাকে তারা বৈধ বলে মনে করে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অধিকার, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের রীতিনীতির তোয়াক্কা করা হয় না।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো দেশের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে বৃহৎ শক্তিগুলো বিশেষ করে আমেরিকা।

এ ব্যাপারে কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞার কারণে কেবলমাত্র সাধারণ জনগণের উন্নয়নের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেছেন, যেসব দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তাদের উচিত এ ন্যক্কারজনক পদক্ষেপ থেকে সরে আসা অথবা জনগণের সর্বনিম্ন সুবিধার যেন ব্যবস্থা করা হয়।

অন্যদিকে জাতিসংঘের কাঠামোর বাইরে থেকেও আমেরিকার মতো বৃহৎ শক্তিগুলো বৈরি দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্ররা সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বহু দেশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

আমেরিকা বর্তমানে সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশে পরিণত হয়েছে এবং এটাকে তারা অন্য দেশের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। দ্যা হিল সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,

আমেরিকা গত দুই দশক ধরে অন্য দেশের ওপর নিজেদের নীতি চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যক্তি বা দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে।

এদিকে, ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্ররা বিশেষ করে ব্রিটেনও বিভিন্ন দেশ ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, নিরাপত্তা এমনকি মানবাধিকার ইস্যুকে অজুহাত করে তারা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। বিশেষ করে যেসব দেশ মার্কিন অন্যায় আবদার মেনে নিতে রাজি নয় তারাই এসব নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হচ্ছে।

যদিও জাতিসংঘ ও আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব রোজম্যারি দি কারলোর অবস্থান থেকে বোঝা যায় জাতিসংঘের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে। পার্সটুডে