সার্চ কমিটির কাছে বিশিষ্ট নাগরিকদের ৪ প্রস্তাব

EC

নির্বাচন কমিশন গঠনে অনুসন্ধান কমিটির (সার্চ কমিটির) কাছে নাগরিক সংগঠন ‘সুজন’ নেতৃবৃন্দ চার দফা প্রস্তাব জানিয়েছেন।

একই সঙ্গে এ সংগঠনের পক্ষে বলা হয়েছে, সার্চ কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে পারছে কিনা এবং তাদের সতর্কতা ও বিবেচনা শক্তি কাজে লাগাতে পারছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মলনে এসব কথা বলা হয়।

সুজনের প্রস্তাবগুলো হচ্ছে-

অনুসন্ধান কমিটিকে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে বিরাজমান আস্থার সংকট দূর করার জন্য তার কার্যপদ্ধতি অবিলম্বে জনগণকে অবহিত করা।

একইসঙ্গে কী মানদণ্ডের ভিত্তিতে ও কী পদ্ধতিতে কমিটি তার বিবেচনাধীন ব্যক্তিদের সুনাম যাচাই করবে এবং তাঁদেরকে অনুসন্ধান করে বের করবে তাও জনগণকে জানাতে হবে।

পরিপূর্ণ তথ্য প্রকাশ- তথা কোনো কিছু গোপন না করার স্বার্থে অনুসন্ধান কমিটির প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত ৩২২ জনের (সঠিক সংখ্যা ৩১৫ জন) নামের পাশাপাশি প্রস্তবকরারী ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নাম প্রকাশ করতে হবে।

প্রাথমিক তালিকা থেকে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারীসহ ২০-৩০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে তা প্রকাশ করতে হবে। এরপর সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা, তাঁদের সম্পর্কে শুনানি করা এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে তাঁদের সম্পর্কে তথ্য নিতে হবে।

অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পরিপূর্ণ সতর্কতা ও যথাযথ বিবেচনাশক্তি কাজে লাগিয়ে একটি প্রতিবেদনসহ ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের তিন দিন আগে প্রতিবেদনটিসহ চূড়ান্ত তালিকা জনগণের অবগতির জন্য প্রকাশ করতে হবে।

অনুসন্ধান কমিটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কমিটির কাজের প্রসেডিংসহ একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রকাশ করতে হবে।

‘সুজন’ সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, আইনবিদ ড. শাহদীন মালিক, পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চৌধুরী,

দিলীপ কুমার সরকার, জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. শাহনাজ হুদা, সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সিকান্দার খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আমরা একটি জটিল সময় পার করছি। সার্চ কমিটির কাছে থাকা ৩১৯ জনের তালিকা থেকে কাকে কী কারণে বাদ দেওয়া হবে তা প্রকাশ করতে হবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বলা হচ্ছে- প্রস্তাবকারী দল/সংগঠন/ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ হলে বিতর্ক হবে। আমরা সে বিতর্ক চাই এবং এখনই এ বিতর্ক হওয়া দরকার।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা ভালো নির্বাচন চাই। এজন্য তার আগে ভালো নির্বাচন কমিশন চাই। গত কয়েকদিন সার্চ কমিটি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা আগের তুলনায় ভালো।

এখন সার্চ কমিটি যদি কোন দল কাদের নাম প্রস্তাব করেছে তা প্রকাশ করে তাহলে দলগুলোর মনোভাব বুঝতে পারব। দলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য, নাকি নিজেদের সুবিধার জন্য অনুগ্রহ প্রাপ্ত সহায়ক নির্বাচন কমিশন চাচ্ছে তা জনগণের জানার প্রয়োজন আছে।

নির্বাচন কমিশন যদি দলনিরপেক্ষ না হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তিনি সার্চ কমিটিকে আরো সময় নেয়ারও প্রস্তাব দেন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, জাতীয় সংসদের আগের দুইটি নির্বাচনে ‘জনগণই ক্ষমতার উৎস- এই সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।

সাংঘাতিক রকমের দুষ্ট নির্বাচন হয়েছে। জনগণের অধিকার আবার ফিরিয়ে দিতে হবে। এজন্য এবারের নির্বাচন কমিশন কেমন হবে তা জানতে সবাই আগ্রহী।