যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের খাজুরা এম এন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) জাকির হোসেন মিনি বিএড পাশের ভূয়া সনদপত্র ব্যবহার করে ১৩ বছর ধরে উচ্চতর গ্রেডে
বেতন ভোগ করছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে সত্যতা মিললেও ওই শিক্ষকের উচ্চতর গ্রেড স্কেল স্থগিত করেননি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাকির হোসেন মিনির বাবা আব্দুল জলিল ছিলেন খাজুরা এম এন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
১৯৯৭ সালে তার বাবা সেই সময়ের ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকবৃন্দের মতামত উপেক্ষা করে নিজের ক্ষমতায় জাকির হোসেনকে সহকারি শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) পদে নিয়োগ দেন।
পরবর্তীতে তাকে শাখা শিক্ষক দেখিয়ে ২০০১ সালে এমপিওভুক্ত করা হয়। ২০০৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে তিনি একটি ভূয়া বিএড সনদপত্র তৈরী করে বিদ্যালয়ে জমা দেন তিনি।
অথচ রয়েল বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে বিএড কোর্সের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার অনুমোদন পায় ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর।
বিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী কিসমত রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইনছার আলীর ছেলে রুহুল কুদ্দুসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে যশোর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়।
২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর দুদকের সহকারি পরিচালক শহীদুল ইসলাম মোড়লের স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় জাকির হোসেন মিনি বিএডের জাল সনদপত্র ব্যবহার করে উচ্চতর বেতন স্কেল বাগিয়ে নিয়েছেন।
এটা করে তিনি বিদ্যালয়ের সাথে প্রতারণা করেছেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি বিএড স্কেল ভোগ করছেন। সরকারি বিধি মোতাবেক বিএড স্কেলের টাকা তাকে সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।
নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে জাকির হোসেন মিনি সব সময় ম্যানেজিং কমিটির তাবেদারি করেন। সভাপতি কে ম্যানেজ করে। প্রধান শিক্ষককে বাধ্য করে তিনি একবার জহিরুল ইসলাম চাকলাদারকে সভাপতি করেন।
এছাড়াও বর্তমান এডহক কমিটির সৈয়দ মুনির হোসেন টগরকে ম্যানেজ করে নিয়মিত কমিটি গঠনে বাঁধা সৃষ্টি করছেন। দুইবার এডহক কমিটি চলছে। নিয়মিত কমিটি গঠনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু সভাপতিকে ব্যবহার করে অনুমোদন দিতে বিলম্ব সৃষ্টি করছেন তিনি।
খাজুরা এলাকার একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, জাকির হোসেন মিনি গুন্ডা ও দাঙ্গাবাজ প্রকৃতির মানুষ। শিক্ষক সুলভ আচারণ তার মধ্যে নেই। ১০-১২ জনের বহর নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেন তিনি।
শিক্ষকদের আতংকিত করতে এটা করেন। ভয়ে কোন শিক্ষক যেন তার অপকর্মের প্রতিবাদ না করেন। তাছাড়া যশোর শহর ও খাজুরা অঞ্চলের মাদকের আড্ডাখানা গুলোতে তার নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মাদক সেবনেরও অভিযোগ রয়েছে। তার মত শিক্ষকের কারণে শিক্ষক সমাজের সুনাম ও ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান বলেন, দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে ভূয়া সনদের সত্যতা মিলেছে।
দুদকের ওই প্রতিবেদনের আলোকে সাবেক সভাপতি আফজাল হোসেনের আমলে জাকির হোসেন মিনিকে সাময়িক ভাবে সাসপেন্ড করা হয়। তার বিএড স্কেলের বেতনের টাকাও কর্তন করা হয়।
কিন্তু সৈয়দ মুনির হোসেন টগর সভাপতি হওয়ার পর সেই সব সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। একই বিষয়ে রুহুল কুদ্দুস নামে এক অভিভাবক তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।
দুদক প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্তই এখন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আদালত এখন যে রায় দেবে সেটি কার্যকর করা হবে।
সভাপতি সৈয়দ মুনির হোসেন টগর বলেন, উচ্চ আদালত জাকির হোসেন মিনির পক্ষে রায় দিয়েছেন। সেই জন্য সাসপেন্ড প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাছাড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। দ্রুতই অনুমোদন দিয়ে চুড়ান্ত করা হবে।