‘ধোঁয়াবিহীন তামাক বেশি সেবন করেন নারীরা’

নারীদের মধ্যে ধূমপায়ীর হার কম হলেও ধোঁয়াবিহীন তামাক (জর্দা, গুল, সাদা পাতা, খৈনী) সেবনের হার পুরুষদের তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

তিনি বলেন, ফলে নারীদের মধ্যে বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠী তামাকের কারণে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।পাবলিক প্লেসে ধূমপানের কারণে অধূমপায়ী নারী ও শিশুরাও মারাত্মক স্বাস্থ্যগত ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

রোববার (১৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত একাডেমির সম্মেলন কক্ষে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) আয়োজিত ‘পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনামের সভাপতিত্বে সেমিনারে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মূ. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

সেমিনারের মুখ্য আলোচক ছিলেন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী। প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, ‘১৫ বছরের ঊর্ধ্বে জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিচালিত গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে-২০১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ (৪৬ শতাংশ পুরুষ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ নারী) তামাক সেবন করেন।

১৮ শতাংশ বা ১ কোটি ৯২ লাখ মানুষ (পুরুষ ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ ও নারী শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ) ধূমপান করেন। ২০ দশমিক ৬ শতাংশ বা ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ (পুরুষ ১৬ দশমিক ২ শতাংশ ও নারী ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ ) ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন।

তিনি বলেন, ধূমপান ও তামাক সেবনের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতিবছরে ৮০ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এর মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ‘পৃথিবীতে প্রতিবছর ১২ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন, যাদের অধিকাংশ শিশু ও নারী।

বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে মারা যায়। এসব রোগাক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয় হয় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা যা তামাকখাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের চাইতে বেশি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাবলিক প্লেস ধূমপানমুক্ত, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ করায় ২০০৯ সালের (৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ) তুলনায় বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৭ (৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ) সালে আট শতাংশ কমেছে।

আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত দেশ হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দপ্তর-সংস্থা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে মাদক ও তামাক নিয়ন্ত্রণে আরও জোরদার ভূমিকা পালন করবে বলে সেমিনারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা।

সেমিনারের বক্তারা নারী ও শিশুর তামাকের ক্ষতি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনতে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরে আলোচনা সেমিনারের আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মহিউদ্দীন আহমেদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার ও প্রবন্ধ উপস্থাপক সৈয়দ মাহবুবুল আলম।