যশোর পৌরসভার চরম অব্যবস্থাপনা, মোনাজাত ছাড়াই ঈদের নামাজ শেষ

ঈদগাহে বৃষ্টির পানিতে ভেজালেন মেয়র
দীর্ঘ দুই বছর পর যশোরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বড় আশা নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছিলেন কেন্দ্রিয় ঈদগাহে। কিন্তু এসেই হতাশ। পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পড়ে মোনাজাত ছাড়াই ছোটাছুটি করতে হয়েছে তাদের।

অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছায় যে ইমাম খুদবা পড়ছেন, আর মুসল্লিরা যে যার মত ছুটেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। হয়নি মোনাজাতও। এবারো কারো কপালে জোটেনি ঈদের কোলাকুলি ও। এতে হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

সবাই একটিই অভিযোগ করেন যশোর কেন্দ্রিয় ঈদগাহে ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে যে ব্যবস্থাপনা থাকার দরকার ছিলো, তার কিছুই করেনি পৌরসভা। এমনকি ছামিয়ানাটাও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কপালে জোটেনি। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তর আগেই ঈদে দিন বৃষ্টি হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলো।

কিন্তু সেটিও আমলে নেয়নি ঈদগাহের অভিভাবক দাবিদার পৌর মেয়র। ফলে করোনার দুই বছরের পর এবারো স্বত্বিতে ঈদের পরিপূর্ণ নামাজ আদায় থেকে বি ত হলো শহরবাসী।

ঈদগাহে মঙ্গলবার সকাল আটটা ১৫ মিনিটে ঈদের জামাত শুরুর কথা ছিলো। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারনে ১৫ মিনিট আগেই শুরু হয়। দেখা যায় মাঠের অর্ধেকের কম অংশে প্লাস্টিকের চট বিছিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

বৃষ্টির ঘনঘটা শুরুর আভাস পেয়েই আটটার পরই নামাজ শুরু হয়। অনেকে প্লাস্টিকের চট না পেয়ে সবুজ ঘাসের উপর নামাজ শুরু করেন। এক রাকাত নামাজ শেষ না হতেই ঝড়-বাতাস শুরু হয়। বাতাসে উড়ে যায় জায়নামাজ নামের পলিথিন। ঠিক দুই রাকাত নামাজ শেষ হতেই ধুমছে বৃষ্টি শুরু হয়।

সালাম ফেরানোর পরই যে যার স্যান্ডেল নিয়ে দৌড় শুরু করেন। কেউ কেউ এ দোকানে সে দোকানের মধ্যে আশ্রয় নেন। অন্যদিকে ইমাম খুদবা চালিয়ে যান। তিন মিনিটের মধ্যেই পুরো ঈদগাহ মানুষ শূন্য হয়ে পরে। মুসল্লিরা যে যার মত নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নেন। এরমধ্যে অধিকাংশ মুসল্লিই বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফেরেন।

এ সময় কথা হয় নামাজ আদায় করতে আসা বারান্দীপাড়ার নুরুল ইসলাম, বেজপাড়ার আব্দুর রহমান, রেলগেটের আজিজ, বড় বাজার এলাকার অপু খান, কারবালা এলাকার মুজাফ্ফার সহ অন্তত ১৫/২০ জনের সাথে।

তাদের দাবি, পৌরসভা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিয়ে রসিকতা করেছেন। ঈদে পৌরবাসীর বিনোদনের জন্য পৌরসভা লাখ লাখ টাকা খরচ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন (প্যারিস রোডে) সড়কে লাইটিং করেছেন। অথচ ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য নূন্যতম ব্যবস্থাটুকু করেননি। যা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না পৌরবাসী।

প্রকাশ্যেই ধিক্কার জানাতে জানাতে বাড়ি ফিরে যান অনেকে। তারা আরও বলেন, এরআগে ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে সামিয়ানা, ত্রিপল, ফ্যানের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এবছর তার কিছুই করা হয়নি। মানুষ খোলামাঠে নামাজ পড়তে এসে শাস্তি স্বরুপ বৃষ্টিতে ভিজেছেন।

এ বিষয়ে যশোর নাগরিক আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, বিষয়টি ন্যক্কারজনক। যদি ঈদের বিনোদনের জন্য প্যারিস রোডে আলোকসজ্জা করা যায়, তবে ঈদগাহে নামাজের জন্য কেন সামিয়ানা দেয়া যাবে না। আগামীতে যেন এ কাজটি করা না হয় সে জন্য তারা মেয়রের সাথে আলোচনায় বসবেন।

এ বিষয়ে যশোরের পৌর মেয়র হায়দার গনি খান পলাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নামাজতো শেষই হয়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র মোনাজাতের আগেই একটু বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসের বিষয়টি তাকে বলা হলে তিনি কোন সদ্যুত্তর দিতে পারেননি।