কমলাপুরে টিকিট ৬৮০০, প্রত্যাশী লাখেরও বেশি

 

ঈদযাত্রায় ঢাকায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে ছয়টি রেলওয়ে স্টেশন থেকে। এর মধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে পুরো উত্তরবঙ্গই। এ স্টেশনের দুই স্থানের কাউন্টার থেকে মাত্র ৬৮০০ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এর বিপরীতে টিকিটপ্রত্যাশীর সংখ্যা লাখেরও বেশি-যা টিকিটের প্রায় ১৫ গুণ। এছাড়া এখানে অব্যবস্থাপনা যেন পদে পদে।

 

ঈদ উপলক্ষ্যে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ৩৮ আন্তঃনগর ট্রেনের মোট ২৭ হাজার ৮৮১টি অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে ১৩ হাজার ৯০টি টিকিট ৬টি স্টেশন থেকে বিক্রি করা হচ্ছে। বাকিগুলো অনলাইনে ওয়েবসাইট ও অ্যাপস থেকে। স্টেশনের টিকিটগুলোর মধ্যে কমলাপুর ও এর সংলগ্ন ৮ নম্বর প্লাটফরম (শহরতলী স্টেশন) থেকে ৬৮০০ টিকিট, বাকি পাঁচটি (বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও ও ফুলবাড়িয়া) স্টেশনের কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হচ্ছে ৭ হাজার ১০০ টিকিট। শনিবার ৬ জুলাইনের অগ্রিম টিকিটি বিক্রি হয়। আজ ৭ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে।

 

 

কমলাপুর স্টেশন ঘুরে ও টিকিটপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা বৃহস্পতিবার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন-শুক্রবার অগ্রিম টিকিট কাটবেন বলে, তাদের বড় একটি অংশই শনিবারও টিকিট কাটতে পারেননি। বাধ্য হয়ে তাদের অনেকেই আজ অগ্রিম টিকিট কাটতে শনিবার বেলা ১১টার দিকেই পুনরায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন। টিকিটপ্রত্যাশীদের কেউ ১৮ ঘণ্টা তো কেউ ২২ ঘণ্টা, এমনকি কেউ ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এরপরও টিকিট পাবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।

 

টিকিটের হাহাকার অন্য স্টেশনগুলোতেও। আর অনলাইনে টিকিট যেন সোনার হরিণ। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও টিকিট কাটতে পারছেন না অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, সীমিত সংখ্যক টিকিটের বিপরীতে ১৫ গুণের বেশি মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। আবার অনলাইনে মাত্র ১৩৯০টি টিকিটের বিপরীতে প্রতি মিনিটে অ্যাপ এবং অনলাইনে ঢুকতে চাচ্ছেন ৫ লাখেরও বেশি মানুষ।

 

ঈদযাত্রায় টিকিট বিক্রি দেখতে রোববার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন করেন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। টিকিট না পাওয়া ক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের নানা প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেছেন, সীমিত টিকিটের বিপরীতে বহুগুণ বেশি লাইনে এবং অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন। তবে, অনলাইন কিংবা কাউন্টার-দুমাধ্যমেই টিকিট বিক্রি হচ্ছে। অনলাইনেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। এদিন মন্ত্রী কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ইসলামী ব্যাংকের সৌজন্যে ৫০টি ট্রলি হস্তান্তর করেন।

 

টিকিটস্বল্পতা ও অনিয়ম প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, অনলাইনেও তো সীমিতসংখ্যক টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এখন অনলাইনে নানা ধরনের প্রতারণা চলছে। কালোবাজারিরা অনেক সার্ভার নিয়ে আগেই হিট করছে। অনেক টিকিট তারা ডাউনলোড করছে। তারপর তারা বিক্রি করছে। এটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে কাজ চলছে। প্রতারকরা কিভাবে এমনটা করছে তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। আগামীতে যাতে এমনটা না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় তিন যুগ ধরেই ঈদযাত্রায় অগ্রিম টিকিট কাটতে আসা সাধারণ মানুষ এমন চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। কিন্তু পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। তিন যুগে আসন সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৭ হাজারের মতো। আর ওই সময়ের মধ্যে ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭ কোটি (বছরওয়ারি)। চাহিদা অনুযায়ী টিকিটের সংখ্যা খুবই কম-এমনটা স্বীকার করে মন্ত্রী শনিবার সকালে বলেন, ‘অবকাঠামো না বাড়িয়ে শুধু কোচ কিনে এ অবস্থার উন্নতি করা যাবে না। চাহিদা ও আমাদের যে সক্ষমতা, তার মধ্যে যে ফারাক-তা যতক্ষণ পর্যন্ত কমাতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি থেকে খুব বেশি উত্তরণ করতে পারব না।’

 

ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, কমলাপুর স্টেশন থেকে উত্তরাঞ্চলে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কমলাপুরসংলগ্ন ৮ নম্বর প্লাটফরম থেকে রাজশাহী এবং খুলনাগামী টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া এবারই প্রথম, উত্তরাঞ্চল যাত্রীদের জন্য জয়দেবপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত একটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালু করছি-যা ঈদের ৪ দিন আগ থেকে চলবে। এ স্পেশাল ট্রেনটির টিকিট জয়দেবপুর ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিক্রি হবে।

 

ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শওকত জামিল মোহসী জানান, ৩ জুলাই দেওয়া হবে ৭ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট, ৪ জুলাই দেওয়া হবে ৮ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট এবং ৯ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট দেওয়া হবে ৫ জুলাই।