কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা দিনদুপুরে ইয়াবা কারবার, অপহরণ, চাঁদাবাজির পাশাপাশি ক্যাম্প কেন্দ্রিক বাজারগুলোও নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে। তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডে কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাও জড়িত বলে অভিযোগ করেছে রোহিঙ্গারা।
তারা জানান, ক্যাম্পে এপিবিএন পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগসাজশে চলায় বলে অপরাধ কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইয়াবা কারবারির তথ্য দিলে বা সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার ভুক্তভোগী কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিলে উলটো বিপদে পড়তে হয়। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন এসব পুলিশ কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, ইয়াবা কারবারিদের সহযোগিতা করেন ৮ এপিবিএন পুলিশের তাজনিমার খোলা ক্যাম্পের বিতর্কিত পরিদর্শক মাহবুব রহমান, উপপরিদর্শক কামরুল ও এএসআই আলমগীর। এ তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ সাধারণ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের। তারা জানান, উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের পরিষদের সাবেক সদস্য আলোচিত ইয়াবা মাফিয়া জয়নাল মেম্বারের সঙ্গে কাজ না করায় রোহিঙ্গাদের হয়রানি করছেন এ তিন পুলিশ কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগীরা জানান, ক্যাম্পে ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি নতুন করে একটি বাজার গড়ে তুলেছেন ইয়াবা মাফিয়া জয়নাল মেম্বার। সেখানে যারা বসে তাদেরকে দিয়ে ইয়াবা বহনসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করান তিনি। আর এতে তার সহযোগী হয়ে কাজ করছেন পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব রহমান ও উপপরিদর্শক কামরুল।
১৩ নম্বর ক্যাম্পের এফ-৩ ব্লকের মৃত আমির হামজার ছেলে মোবারক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, গত ৩০ জুন গভীর রাতে সিকান্দার, ইউনুচ, নুর হোসেনসহ জয়নাল মেম্বারের নেতৃত্বে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই কামরুল, এএসআই আলমগীর আমার বাড়িতে যান। এ সময় আমাকে না পেয়ে ছোট ভাই আয়াতুল ওমরকে নিয়ে যান। পরে ১০ হাজার ইয়াবা দিয়ে তাকে চালান করে দেয় পুলিশ। এসআই কামরুল বাড়ি এসে আমার মাকে হুমকি দেন। জয়নাল মেম্বারের বাজারে না বসলে আমাকেও যে কোনো সময় ছোট ভাইয়ের মতো ইয়াবা দিয়ে চালান করে দেবেন।
একই অভিযোগ জাফর আহাম্মদের ছেলে শহিদুল্লাহর। তার দাবি, এসআই কামরুল, এএসআই আলমগীর বিভিন্ন সময় জয়নাল মেম্বারের সঙ্গে তার বাড়িতে যান ও হুমকি দেন।
জয়নালের বাজারে ব্যবসা করতে না গেলে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেবেন। তাদের কথা না শোনার কারণে গেল ৩০ জুন রাতে তার ভাই সানাউল্লাহকে বাড়ি থেকে এসআই কামরুল ও আলমগীর ধরে নিয়ে যান। পরে ইয়াবা দিয়ে চালান করে দেন।
একই ব্লকের খুরশিদা বেগম বিলাপ করে বলেন, আমার ছেলে আয়াতুল হককে জয়নাল মেম্বারের সঙ্গে পুলিশের একটি দল বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ইয়াবা দিয়ে হাজতে পাঠিয়ে দেন। এ সময় পুলিশ আমার ছেলের স্ত্রীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন এবং নারীদের মারধর করেন।
উখিয়ার পালংখালীর চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব রহমান সব অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তিনি রোহিঙ্গা ও ক্যাম্প কেন্দ্রিক সন্ত্রাসী ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করার কারণে সন্ত্রাসীরা দিনদিন আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বৃদ্ধি পেয়েছে ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-পরিদর্শক কামরুল বলেন, ক্যাম্পে অভিযানগুলো কর্মকর্তাদের নির্দেশে চালানো হয়। রাতের অভিযানে জয়নাল মেম্বারের উপস্থিতি থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেম্বার হিসাবে তিনি পরিচিত। সুবিধার জন্য তাকে সঙ্গে নেওয়া হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে এএসআই আলমগীর বলেন, এসব মিথ্যা কথা। তাজনিমার খোলা ক্যাম্পের পরিদর্শক মাহবুব রহমান বলেন, আমি ছুটিতে বাড়িতে আছি। অফিসে আসেন সামনাসামনি কথা বলব।