যৌন হয়রানি চবির আরও ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সম্প্রতি ঘটে যাওয়া তিনটি ঘটনার অভিযোগ জমা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ সেলে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সেই তিন অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে তিন নম্বর অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও চার শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে সেল।

সোমবার আটকে থাকা তিন অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে ও শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বেলা ১২টায় এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. বেনু কুমার দে, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এসএম মনিরুল ইসলাম এবং প্রক্টর রবিউল ইসলাম ভূঁইয়া।

বহিষ্কারপ্রাপ্ত চার শিক্ষার্থী হলেন, দর্শন বিভাগের রাজু ও ইমন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রুবেল হাসান এবং আরবি বিভাগের জুনায়েদ। তারা চারজনই ২০১৯-২০২০ সেশনের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিএফসি গ্রুপের অনুসারী।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এসএম মনিরুল হাসান বলেন, পুরোনো তিন অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছি আমরা। দ্রুত এগুলো কার্যকর হবে।

এছাড়া গত ১৭ জুলাইয়ের যৌন নিপীড়নের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের চার দাবি মেনে নেওয়ারও দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ১৭ জুলাইয়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি একজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া চবির দুই শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিরাগতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ নিরাপদ। আমার ছাত্রী যে হেনস্থার শিকার হয়েছে, এজন্য আমাদেরও কষ্টের শেষ নেই। আমরা নিশ্চিত করছি ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপদ।

সংবাদ সম্মেলনে চবিতে চলমান আন্দোলনের চার দফা দাবির মুখে সেলে আটকে থাকা তিন অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন উপাচার্য। প্রথম অভিযোগ, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সস বিভাগের শিক্ষক এটিএম রফিকুল হক এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্থা করেনে। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি দেয়নি সেল। লিখিতভাবে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দ্বিতীয় অভিযোগ, বেগম খালেদা জিয়া হলের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতন করেন রসায়ন বিভাগের এক ছাত্র। তাকেও কোনো শাস্তি না দিয়ে লিখিতভাবে সতর্ক করেছে সেল।

তৃতীয় অভিযোগ, গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুই ছাত্রী ক্যাম্পাসের বাসায় ফিরছিলেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে তাদের পথ আটকে জিজ্ঞাসাবাদ ও অশালীন মন্তব্য করেন চার ছাত্র। ছা্ত্রী উত্তর না দিলে তাকে শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে হেনস্তা করা হয়। এ অভিযোগেই ওই চার শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হল।

তবে এসব সিদ্ধান্তের পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলবে কি-না, এ বিষয়ে এখনও কোনো কিছু জানাননি আন্দোলনকারীরা।

গত ১৭ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে পাঁচ তরুণের হাতে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ও মারধরের শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় পাঁচ তরুণ ওই ছাত্রীকে বেঁধে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা এক বন্ধু প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করা হয়।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। এর একদিন পর বুধবার মামলা করেন হাটহাজারী থানায়। শিক্ষার্থীরা নামেন আন্দোলনে।