শিগগিরই ডলারের বাজার স্থিতিশীল হবে: এবিবি চেয়ারম্যান

আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে আস্থার অভাব এবং বাজার অস্থির করে সেখান থেকে কিছু গোষ্ঠীর মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার কারণে অস্থিতিশীল ডলারের বাজার। তবে শিগগিরই ডলারের বাজার স্থিতিশীল হবে। ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন এ মন্তব্য করেছেন।

বৃহস্পতিবার ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংক খাত নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে বেশ কিছু বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে পেট্রোলিয়ামসহ কিছু পণ্যের দাম কমে আসছে।। দুয়েক মাসের মধ্যে এর সুফল পাওয়া যাবে।

তিনি মনে করেন, ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতা শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আসবে। অবশ্য এর মানে এই নয় যে, ডলারের দাম আবার ৮৪ টাকায় নেমে আসবে। দর স্থিতিশীল হয়ে ৯৬, ৯৮ বা ১০০ টাকায় হবে এমনটিও তিনি বলতে চান না। দর নির্ভর করবে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর।

এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বাজার বর্তমানে অচল। একে সচল করতে হবে। চলমান ডলারের বাজারের অস্থিরতায় হয়ত কোনো ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে আস্থা বাড়াতে হবে। তার মতে, আন্তঃব্যাংক লেনদেন ব্যবস্থা চালু করতে পারলে সংকট কাটাতে সহায়ক হবে।

এবিবি চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের মতো দেশে ডলারের বাজার একেবারে উন্মুক্ত করা সম্ভব নয়। কিছুটা ম্যানেজ করতে হবে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রার বাজার সচল, আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন তিনি।

ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনে জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালার বিষয়ে তিনি বলেন, এ সার্কুলারের ফলে ব্যাংকগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত হবে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতেও জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত হবে।

এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, ঋণ পুনঃতফসিল সব দেশেই হয়। কিন্তু কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি তা অনুমোদন করে না। এমনটা বিশ্বের কোথাও নেই। ঋণ গ্রহীতাদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক চেনে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নয়। নতুন নীতিমালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল করে না। এটা ব্যাংকারদের কাজ। আগে ঋণ পুনঃতফসিল হতে ৩/৪ মাস সময় লাগত। এখন ঋণ পুনঃতফসিল হবে সর্বোচ্চ ৭ দিনে। এতে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি ভালো হবে।

সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ঋণ পুনঃতফসিল সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনটি ব্যাংকারদের দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহি করবে। যদি ব্যাংকগুলোতে সুশাসন এবং দক্ষ জনবল থাকে তাহলে অবশ্যই সেই ব্যাংক এ সার্কুলারের মাধ্যমে ভালো ফলাফল করবে।

যদি ব্যাংকে সুশাসন না থাকে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়েও গভর্নর কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। ১০টা সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের তালিকা করে পরিদর্শন ও তদারকি আরও বাড়ানো হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নজর রাখতে বলেছেন গর্ভনর। অনিয়ম হলে সেখানে শূন্য সহনশীলতা দেখানো হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

দীর্ঘমেয়াদি ঋণের চাপ বাড়ছে:

পুঁজিবাজার দুর্বল হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য ব্যাংকে চাপ বাড়ছে বলে মনে করেন এবিবি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ব্যাংক মূলত স্বল্পমেয়াদী ঋণ দেয়। সর্বোচ্চ ২/৩ বছরের জন্য চলতি মূলধন বিতরণ করে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, যা মূলত বন্ড মার্কেট বা পুঁজিবাজারে সম্ভব।