ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ধাওড়া গ্রামের কৃষক আমিন বিশ্বাসের একচিলতে মাঠান জমি নেই। বাড়ির উঠোনে নিজেরসহ ভাইদের ৩৫ শতক জমিতে বসতঘরের সামনেই বসিয়েছেন সবজির মাঠ। বাড়িতে ঢুকতে গেলে খুব সাবধানে ঢুকতে হবে কেননা, মনে হতে পারে হয়তবা কোন সবজির ঘাড়ে পা পড়ছেন। এমন সবজিঘেরা বাড়িটি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ধাওড়া গ্রামে।
সামান্য লেখাপড়া জানা কৃষক আমিন বিশ্বাস প্রমান করেছেন লাখলাখ টাকা খরচ করে বিদেশে না গিয়ে ২০-২৫ শতক জমি চাষ করেই একজন মানুষ স্বাচ্ছন্দে তার সংসার চালাতে পারেন, মেটাতে পারেন পারিবারিক সবজি ও ফলের চাহিদা। এজন্য দরকার পরিশ্রম, ধৈর্য্য আর একাগ্রতা। সেটি প্রমাণ করে তিনি পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার।আমিন বিশ্বাস (৫৩) জানালেন, বাড়ির কয়েকশতক জমি ছাড়া নিজের আবাদযোগ্য জমি না থাকায় পরিবার নিয়ে বেশ কষ্টে ছিলেন। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি এবং কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি তার নিজেরসহ ভাইদের ৩৫ শতক জমিতে শুরু করেন সবজি আবাদ। প্রথম বছর থেকেই ভালো ফল পেতে থাকেন তিনি।
এখন সারাবছর বিভিন্ন সবজি ও ফলের চাষ করে ছয় সদস্যের পরিবার চালাচ্ছেন। নিজে এবং স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন খেটে খুটে তিন ছেলের দুজনকে পড়িয়েছেন বিশ^বিদ্যালয়ে, ছোটটি স্থাানীয় মাদ্রাসায় পড়ছে। ঠিক এ মূহুর্তে ব্যাপক সবজি না থাকলেও আমিন বিশ্বাসের বাড়ির আঙিনায় রয়েছে সবুজশাক, উচ্ছে, চিচিঙ্গা, জাংলায় শোভা পাচ্ছে পুঁইশাক আর আঙিনার চারদিকে দুলছে মেটে আলু বা গাছ আলু। পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও বাজারে বিক্রির জন্য লাগিয়েছেন কদবেলের চারা যা ফল দিচ্ছে বেশ কয়েকবছর। বড় আকারে একটি বেদানা ও ড্রাগনগাছে ধরেছে ফল।
ওই কৃষকের মতে, দেশে অসংখ্য ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে বা না শিখে একটা কাজের জন্য জমিজিরাত বেচে বা অর্থলগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। অনেক সময় প্রতারিতও হচ্ছে, জীবনও যাচ্ছে অঘোরে। অথচ, সম্পদের ক্ষতি করে, জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে তারা সহজেই ২০-২৫ শতক জমিতে সবজিচাষ করলে নিজের পরিবারের দৈনন্দিন সবজি চাহিদা মিটয়েও বাজারে বিক্রি করে স্বাচ্ছন্দে সংসার চালাতে পারেন। এতে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা কমবে, তারা নিজেরা আয়বৃদ্ধিমূলক কাজে নিয়োজিত হয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অংশীদার হতে পারবেন বলে মনে করেন আমিন বিশ্বাস।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জানান, কৃষিসেক্টরে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে তারা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ির আঙিনায় সবজি ও ফলমূল চাষ করে যাতে কৃষকরা তাদের পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে কিছু আয় করতে পারেন সেজন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রদর্শণী, প্রযুক্তি ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে সাধারন মানুষের পুষ্টিচাহিদা পূরণ সহজ হবে, ভোক্তারাও নিরাপদ সবজি ও ফলমূল পাবেন।