গণপরিবহণে নৈরাজ্য যেমন খুশি তেমন ভাড়া আদায়

 

তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকেই বাস ভাড়া নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। সংকট সৃষ্টির জন্য সড়কে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বাসের সংখ্যা। ফলে কর্মস্থলে যাওয়া-আসার জন্য ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা বাসে উঠছেন। সোমবার রাজধানীর শাহবাগ থেকে

 

জ্বালানি তেলের নতুন দামের কারণে সারা দেশেই বেড়েছে বাস ভাড়া। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বেড়েছে ১৬.২৭ শতাংশ। এরপরও যাত্রীদের কাছ থেকে যেমন খুশি তেমন ভাড়া আদায় করছে বাসগুলো।

 

মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণাকে সুযোগ হিসাবে নিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে এই কাজ করছেন তারা। নতুন ভাড়া নির্ধারণের দ্বিতীয় দিনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীদের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

 

 

বাসগুলোতে নেই ভাড়ার তালিকা। সরকারের পক্ষ থেকে এসব অন্যায় রুখতে কঠোর তদারকির কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। রাজধানীর কিছু কিছু স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে বেশিরভাগ বাসেই চলছে ভাড়া নৈরাজ্য। প্রতিবাদ করতে গিয়ে পরিবহণ শ্রমিকদের হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ।

 

সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কে পরিবহণের চাপ অন্যান্য সময়ের থেকে কম। তবে বাস চলাচল স্বাভাবিক। যাত্রীর চাপ ছিল অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি। তেলের মূল্যবৃদ্ধির এই সময়ে ব্যক্তিগত পরিবহণের পরিবর্তে অনেকে বাস বেছে নিয়েছেন। এর বাইরে বাসের নিয়মিত যাত্রী তো আছেই। সেকারণেই গণপরিবহণে যাত্রীর চাপ তৈরি হয়। এই সুযোগে যাত্রীদের পকেট কাটছে পরিবহণ শ্রমিকরা। যাত্রীদের অভিযোগ, এভাবে কয়েকদিন অতিরিক্ত ভাড়ার জন্য ‘ঝামেলা’ করবে বাসগুলো।

 

রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ নগর পরিবহণে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। এর আগে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ছিল ২ টাকা ১৫ পয়সা। মিনিবাসে আগে ২ টাকা ৫ পয়সা ছিল, এখন ২ টাকা ৪০ পয়সা। বাস-মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া আগের মতোই যথাক্রমে ১০ ও ৮ টাকা। অথচ বর্ধিত ভাড়া কাগজেই সীমাবদ্ধ। বাসগুলো নিজেদের মতো ভাড়া ঠিক করে নিয়েছে। কেউ ১/২ টাকা ভাড়া বাড়ায়নি। গন্তব্যে পৌঁছতে ৫, ১০, ১৫, ২০ এমন অঙ্কে ভাড়া বাড়িয়েছে তারা।

 

রামপুরা থেকে যমুনা ফিউচার পার্কে নিয়মিত যাতায়াত করেন জাহিদুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, গত বছরের নভেম্বরে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়ে দেয় পরিবহণগুলো। এই দূরত্বে যেখানে আগে ছিল ১০ টাকা, নভেম্বরের পর তা ২০ টাকা আদায় করে। এখন যার কাছে যেমন পারছে আদায় করছে।

 

এদিকে রাইদা পরিবহণের এক চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, আমরা ভাড়া বেশি নিচ্ছি সেটা সত্য। কিন্তু এখানে আমাদের তো কিছু করার নেই। মালিকরা যেভাবে বলে আমরা সেভাবেই ভাড়া নেই। ওয়েবিল হিসাবে তারা আমাদের থেকে টাকা বুঝে নেয়। এজন্য বাসের রুটে কয়েকটি ‘চেক’ রয়েছে। সেখানে মাথা গুনে যাত্রী সংখ্যা হিসাব করে লিখে দেয় চেকাররা। দিনশেষে সেই হিসাবেও দিতে হয় ভাড়ার টাকা। আমরা কম নিলেও তাদেরকে বেশিই দিতে হবে। সেটা তো আর আমরা পকেট থেকে দেব না।

 

এদিকে যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ায় রাজধানীর পোস্তগোলা-দিয়াবাড়ী রুটে চলাচলকারী রাইদা পরিবহণের একটি বাসকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার রামপুরার সড়কে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত বাসটিকে এ জরিমানা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোশনুর রুবাইয়াৎ। তিনি বলেন, ভাড়া তদারকিকালে রাইদা পরিবহণের একটি বাস থামানো হলে যাত্রীরা বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। দেখা যায় বাসে নতুন ভাড়ার তালিকাও নেই। পরে বাসটিকে জরিমানা করা হয়। সেখান থেকে অতিরিক্ত আদায়কৃত অর্থ যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হয়। সারাদিন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও নতুন ভাড়ার তালিকা প্রদর্শনের বিষয়টি তদারকি করা হয়েছে।

 

পল্টন থেকে নর্দ্দা বাসস্ট্যান্ডে নিয়মিত এসি বাসে চলাচল করেন সুমন আহমেদ। নর্দ্দায় কথা হয় তার সঙ্গে। এই যাত্রী জানান, গত নভেম্বরে ভাড়া বৃদ্ধির পর পল্টন থেকে যেকোনো এসি বাসে এলে নিত ৮০ টাকা। এখন এফ আর মটরসে নেয় ৯০ টাকা আর গ্রিন ঢাকা পরিবহণে নেয় ১০০ টাকা। মতিঝিল থেকে যমুনা ফিউচার পার্কে আসা মনির হোসেনও এসি বাসে আগের চেয়ে ২০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধির কথা জানান।

 

এদিকে বিড়ম্বনার চিত্র দেখা গেছে দূরপাল্লার পরিবহণগুলোতেও। প্রতিটি কাউন্টার থেকেই বর্ধিত ভাড়া চাওয়া হয়েছে। অনেক সময় বর্ধিত ভাড়ার চেয়েও নেওয়া হচ্ছে বেশি। এতে কাউন্টারগুলোতেও মানুষের ভিড় ছিল কম। একেবারে নিরুপায় হয়ে মানুষ টিকিট কিনছে। দেশের অন্যতম ব্যস্ত বাস টার্মিনালগুলোর ।