বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব: ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চান নীতীশ

 

রাতারাতি বদলে গিয়েছে বিহারের রাজনৈতিক দৃশ্যপট। এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে এসেছে নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)। মঙ্গলবার বিজেপির সঙ্গত্যাগের ঘোষণা দিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন তিনি। এবার রাষ্ট্রীয় জনতা দল, কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহাগটবন্ধনে নতুন সরকার গড়তে চলেছেন নীতীশ কুমার।

 

বুধবার দুপুরের দিকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নীতীশ কুমারের ফের শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে। তার এই মন্ত্রিসভার উপ-মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) প্রধান তেজস্বী যাদব। নীতীশের নতুন মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসসহ অন্যান্য দলের মন্ত্রীরাও থাকবেন। তবে তারা পরে শপথ নেবেন।

 

 

ভারতীয় গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদরা মনে করছেন, নীতীশ কুমার আর রাজ্য রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকতে চান না। রাজ্যের পাট চুকিয়ে পাকাপাকিভাবে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চান তিনি। এজন্যই মূলত বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছেন তিনি। বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে এবার সরাসরি নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে নামতে চাইছেন এই জেডিইউ নেতা৷ বিরোধীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চান তিনি৷

 

 

এর আগে মঙ্গলবার দুবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন নীতীশ। রাজ্যপালকে জানিয়ে দেন, বিজেপির সঙ্গে আর থাকবেন না তিনি। পদত্যাগের আগে নিজ দলের বিধায়ক ও পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরে বিকেলে রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

 

এর ঘণ্টাদুয়েক পর বিজেপিকে বাদ দিয়ে নতুন সরকার গঠনের অনুমতির জন্য রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) প্রধান তেজস্বী যাদবকে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন নীতীশ কুমার। তিনি জানান, জেডিইউ, আরজেডি, কংগ্রেস, বামসহ সাতটি দল ও একজন নির্দলের সমর্থন তার সঙ্গে রয়েছে। এসময় বিহার বিধানসভায় দুই তৃতীয়াংশ বিধায়কের সমর্থন আছে জানিয়ে নতুন করে সরকার গঠনের দাবি জানান তিনি।

 

প্রায় দেড় দশক আগে বিহারে যাদব পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন নীতীশ। জেডিইউয়ের ওই নেতাকে দীর্ঘদিন ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখেছেন আরজেডি নেতা শিবানন্দ তিওয়ারি।

 

বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হলেও, নীতীশের পাখির চোখ ছিল প্রধানমন্ত্রিত্ব। তাই বিজেপির মতো দলের সঙ্গে জোট করেও নিজের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখার প্রশ্নে প্রথম থেকেই বিশেষ ভাবে যত্নবান ছিলেন নীতীশ। সেই কারণে একাধিক বার তার সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের মনোমালিন্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তাতেও সংখ্যালঘুদের পাশ থেকে সরে আসেননি নীতীশ।

 

রাজনীতিবিদদের মতে, নীতীশের প্রথম এনডিএর সঙ্গ ত্যাগও সেই প্রধানমন্ত্রিত্বের দিকে তাকিয়ে। ২০১৩ সালে, তার পরের বছর হতে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করায় প্রথমবার এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন নীতীশ। সেই সময়ে তার লক্ষ্য ছিল, ভোটের পরে অ-কংগ্রেসি দলগুলি ভালো ফল করলে সেই জোটের নেতা হিসেবে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবি জানাবেন তিনি। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোদীর বিপুল ভোটে জয় নীতীশের পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয়। উল্টো বিহারের ৪০টি লোকসভা আসনের মধ্যে কেবল দু’টি আসন পায় নীতীশের দল। বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে পেরে এনডিএ জোটে ফিরে যেতে বাধ্য হন নীতীশ।

 

ফের ভারতের লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। বিহারে বিজেপির সঙ্গে জোট বজায় থাকলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নীতীশ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকতেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তার প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যেত। এদিকে বিহারে ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে বিজেপি। বিহারে তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জেডিইউ আত্মপ্রকাশ করলে নীতীশের রাজনৈতিক জীবন কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। আর তা আটকাতেই পরিকল্পিত পদক্ষেপ করেছেন নীতীশ।

 

জেডিইউ নেতৃত্বের মতে, নীতীশের লক্ষ্য ২০২৪ সালের আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা। একারণে এনডিএ ছেড়ে ইউপিএর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন তিনি।

 

আরজেডিকে নীতীশ যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। আর নীতীশের ইচ্ছা, শেষের এক বছর তেজস্বী যাদব মুখ্যমন্ত্রী হন, যাতে তরুণ ওই নেতার নেতৃত্বে ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে পারে মহাজোট।