জোয়ারে সাত জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও সাগরে অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ২৩ নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে এসব নদীতে।

এতে সাতটি জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত ও নদীবন্দরে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়া হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ রয়েছে ৮ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল।

বরিশাল নগরের প্রধান সড়ক সদর রোড, হেমায়েত উদ্দিন রোড, নবগ্রাম রোডসহ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও হাঁটুপানি।

আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. আবদুল কুদ্দুস জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার গভীর রাত থেকে বৃষ্টি চলছে। পূর্ণিমার প্রভাবে নদনদীতে চলছে অস্বাভাবিক জোয়ার। বৃষ্টি আরও দু-তিন দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

 

পাউবো সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের নদনদীর ১০টি পয়েন্টে পানির লেভেল বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

 

বাগেরহাটের সদর, কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, মোংলা ও শরণখোলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রোববার দুপুরে জোয়ারের পানিতে শহরের খানজাহান আলী সড়ক, রাহাতের মোড়, বাসাবাটি, মুনিগঞ্জ, মেইন রোডের প্রধান ডাকঘর সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে।

 

বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরতে যাওয়া ফিশিং ট্রলারগুলো নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে সুন্দরবন। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, বাগেরহাটে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে নদনদীর পানি।

 

পটুয়াখালী জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। ঢেউ আছড়ে পড়ছে কুয়াকাটা সৈকতে। এখানে আসা পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। রোববার দুপুরে উপকূলের নদনদী ও সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পানি লোকালয়ে ঢুকে তলিয়ে যায় বেড়িবাঁধ।

 

রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চিনাবুনিয়া, গরুভাঙা, বিভির হাওলা, কুলের চর, মরাজঙ্গি, গোলবুনিয়া, উত্তর চালিতাবুনিয়াসহ ১০টি গ্রাম এবং কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া, চৌধুরীপাড়া, মুন্সীপাড়া, হাসনাপাড়া, মঞ্জুপাড়া, কালাউপাড়া, ধনজুপাড়া, বানাতিপাড়াসহ ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ।

 

লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলার ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। গত পাঁচ দিন ধরে পানি ওঠানামায় চরম দূর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন নদীতীরের বাসিন্দারা। পন্টুন ও গ্যাংওয়ে ডুবে ঘাটে যানবাহন অপেক্ষায় থাকছে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা।

 

জোয়ারের তীব্র স্রোতে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট, লুধুয়া, নাছিরগঞ্জ, চরফলকন, মতিরহাট, বাংলাবাজার, আসলপাড়া, জনতাবাজার ও চর আলেকজান্ডার এলাকায় মেঘনা নদীর ১২টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে চার শতাধিক পরিবার ভাঙনের মুখে পড়েছে।

 

খুলনার কয়রায় পাউবোর ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের চরামুখা এলাকার বাঁধটি ফের ভেঙে গেছে। এতে অন্তত সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রোববার দুপুরে বাঁধের তিনটি স্থান ভেঙে যায়। গত শনিবার জোয়ারে এসব স্থান ভাঙলেও তাৎক্ষণিক গ্রামবাসী তা মেরামত করেছিলেন।

 

এর আগে ১৭ জুলাই ওই এলাকার বাঁধ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। সে সময় গ্রামবাসীর প্রচেষ্টায় রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো হয়।

 

দক্ষিণ বেদকাশি ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুস সালাম খান জানান, বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো দ্রুত মেরামত হলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। এই মূহূর্তে এ ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে আমনের বীজতলাসহ চিংড়ি ঘেরের ক্ষতি হয়েছে।

 

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, ৪ থেকে ৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের চাপ সামলাতে না পেরে বাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে গেছে। এটি মেরামতে সময় লাগবে।

 

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সোনাদিয়া, তমরদ্দি ও চরকিং ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের কয়েকটি অংশ ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বাঁধ না থাকায় প্লাবিত হয়েছে চানন্দীর দুটি, নলচিরা একটি ও নিঝুম দ্বীপের সব ওয়ার্ড। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

 

স্বরূপকাঠি, বানারীপাড়া ও কাউখালী উপজেলার সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।