বাঙালির শোকের দিন আজ

 

আজ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। বাঙালির শোকের দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতি হারিয়েছে ইতিহাসের মহানায়ককে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সেদিন ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কতিপয় বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকের চক্রান্তে এবং সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী উচ্চাভিলাষী সদস্যের বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন শাহাদাতবরণ করেন তাঁর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল ও ১০ বছরের শেখ রাসেল এবং দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। বিদেশে থাকায় জীবন রক্ষা পায় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার।

নৃশংসতায় আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত ও আবদুল নঈম খান রিন্টু। বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা-কর্মচারীও প্রাণ হারান।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ সরকারি ছুটি। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

দিনের কর্মসূচি: রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোর সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। সেখানে বিশেষ মোনাজাত ও পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে শহীদদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ ও দোয়ায় অংশ নেবেন। দুপুর ১২টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ১টায় সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণে বিশেষ দোয়া মাহফিলে অংশ নেবেন তিনি।

এ উপলক্ষে বঙ্গভবনে বাদ আসর মিলাদ মাহফিল হবে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ মিলাদে যোগ দেবেন। সারাদেশের মসজিদগুলোতে পবিত্র কোরআনখানি, মোনাজাত, দোয়া মাহফিল এবং মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংস্থা কর্মসূচি পালন করবে। আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ সোমবার সূর্যোদয়ের ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সর্বস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা ও কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, ৮টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে ও দুপুর ১২টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাদ জোহর কেন্দ্রীয়ভাবে বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সুবিধামতো সময়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা, দুপুরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে। বাদ আসর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হবে। আগামীকাল বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় সভাপতিত্ব করবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করার জন্য দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দল ও সংগঠন দিবসটি পালনে কর্মসূচি নিয়েছে।