পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য ঘিরে সরগরম রাজনৈতিক অঙ্গন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা পালটাপালটি বক্তব্য দেওয়ায় উত্তপ্ত হচ্ছে মাঠ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন-পররাষ্ট্রমন্ত্রী দলের কেউ নন। তার বক্তব্য আওয়ামী লীগের বক্তব্য নয়। আওয়ামী লীগ কারও দয়ায় ক্ষমতায় আসেনি। ক্ষমতায় থাকতেও কারও তোয়াক্কা করে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির নেতারা। তাদের দাবি-সরকার যে অন্যের আনুকূল্যে টিকে আছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে তা প্রমাণিত হয়েছে। এ বক্তব্য মন্ত্রীর ব্যক্তিগত হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে বরখাস্ত করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন তারা।
কিন্তু দলটি বাস্তবে তা করেনি। এতে প্রমাণ হয়, মন্ত্রী তাদেরই লোক, তাদের কথাই বলেছেন। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের দায় সরকার এড়াতে পারে না। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এমন বক্তব্যে প্রতিবেশী বন্ধু দেশ ভারতকেও অস্বস্তিতে ফেলেছে
ক্ষমতার উৎস জনগণ অন্য কেউ নয়: আওয়ামী লীগ
ক্ষমতায় টিকে থাকা প্রসঙ্গে ভারতকে জড়িয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যের দায় নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) আওয়ামী লীগের কেউ নন, তার এ বক্তব্য আওয়ামী লীগের দলীয় বক্তব্য নয় বলেও মন্তব্য করেছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা। তারা বলছেন-আওয়ামী লীগ কারও দয়ায় ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। আমাদের ক্ষমতার উৎস বাংলাদেশের জনগণ, অন্য কেউ নয়। ক্ষমতায় থাকতে আমরা কারও তোয়াক্কা করি না।
শনিবার বিএমএ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু, জননেত্রী শেখ হাসিনা-তাদের আদর্শ ধারণ করি। এটাই আমাদের বড় অস্ত্র। আমাদের ক্ষমতার উৎস বাংলাদেশের জনগণ, অন্য কেউ নয়। বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে প্রভু নেই। আপনাদের (বিএনপি) মতো আমাদের প্রভু নেই। অতীতে খারাপ সময়ে কে আমাদের সঙ্গে ছিল, এটা মাথায় রেখেই বন্ধুত্ব করি। কারও দয়ায় আমরা ক্ষমতায় আসিনি। দেশের জনগণ আমাদের সমর্থন করেছে। আল্লাহপাকের অশেষ রহমত আছে সেজন্যই আমরা ক্ষমতায় আছি। ইনশাআল্লাহ ফখরুল সাহেব ও তাদের সহকর্মীরা জনমতের তলানিতে পৌঁছেছেন। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনটা আসুক, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা প্রমাণ পাবেন। তখন প্রমাণ পাবেন শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কত উঁচুতে। আমাদের প্রমাণ করতে হবে না, আপনারাই টের পাবেন। তিনি বলেন, আপনাদের দলের নেতৃত্বের প্রতি নেতাকর্মীদেরই আস্থা নেই। আপনাদের দলের অনেকেই তো আমাদের কাছে আসে। বিএনপির কেন্দ্রীয়, জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাই আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চান। আওয়ামী লীগের দরজাটা খুলে দিলে দেখা যাবে, যোগদানের লাইন কত বড়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে বিএমএ আয়োজিত সভায় সংগঠনটির সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সভাপতিত্ব করেন।
বিএসএমএমইউ আয়োজিত শোক দিবসের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রজ্জাক বলেন, কেউ যদি বলে, অমুক দেশ আমাদের স্থিতিশীল করবে, ক্ষমতায় রাখবে, এটা ভিত্তিহীন কথা। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। কাজেই আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ, বিদেশ, শক্তিশালী দেশ, পরমাণবিক শক্তিশালী দেশ, কাউকেই তোয়াক্কা করি না। তিনি আরও বলেন, হুমকি দিয়ে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। আর বিএনপি যেভাবে নিজেদের কবর খুঁড়েছে, তারা কোনোদিন ক্ষমতার আসতে পারবে না। আমরা আমাদের শক্তিতে, জনগণের শক্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসব। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালে নির্বাচন এই সরকারেই অধীনেই হবে। ইসি যে নির্দেশনা দেবে সেভাবে সরকার কাজ করবে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন আওয়ামী লীগের কেউ নন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের দলের কেউ নন। এটা (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য) আমাদের দলের কোনো কথা নয়। আমাদের দল তার এই বক্তব্যে বিব্রত হওয়ার প্রশ্নেই উঠে না। শনিবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকরা তার সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে সব সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন তাদের এড়িয়ে যান।