দিনাজপুরে মুখোমুখি শিবলী-ফিজার একই অভিযোগে বারবার কর্মসূচি

 

দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) শিবলী সাদিক ও তাঁর চাচা দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আবারও সাঁওতালদের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে তিনবার সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি করে এই জমি দখলের অভিযোগ করলেন আদিবাসীরা।

তবে আদিবাসীদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন শিবলী সাদিক। তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নীলনকশা করা হচ্ছে। তাঁর চাচা দেলোয়ার হোসেন বলেন, একটা ইস্যু ঘিরে তিনবার সংবাদ সম্মেলন করাটা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই না। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার জড়িত বলে তিনি দাবি করেন।

 

 

এর আগে গত ২৫ আগস্ট শিবলী সাদিক ফেসবুক লাইভে এসে এমপি ফিজারের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে গ্রুপিং, নিজ দলের এমপিদের নামে অপপ্রচার ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি, দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে দেওয়ার অপকৌশল, পকেট কমিটি গঠনসহ নানা অভিযোগ করেন। এমনকি বিভিন্ন সংসদীয় আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেওয়ার অভিযোগও করেন তিনি।

গত মঙ্গলবার আদিবাসীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের ৭৭ দশমিক ৬১ একর জমি দখল হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এর আগেও তাঁরা গত ২৪ আগস্ট দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। তারও আগে গত ৩০ জুলাই দিনাজপুর প্রেস ক্লাবে একই অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন আদিবাসীরা। যদিও সংশ্নিষ্ট কাগজপত্র সংবাদকর্মীদের সরবরাহ করা হয়নি।

 

 

সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচিগুলোতে দাবি করা হয়, জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে তাদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মূলত তাঁদের জমির ওপরই নির্মিত হয়েছে পিকনিক স্পট স্বপ্নপুরী। এসব জমি ফেরত চাইতে গেলে তাঁদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে আদিবাসীদের জমি দখলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিবলী সাদিক দুষছেন মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারকে। তিনি দাবি করেন, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হওয়ার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ফেসবুক লাইভে শিবলী সাদিক বলেছেন, জমি দখল নিয়ে তাঁর ও তাঁদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান স্বপ্নপুরীর বিরুদ্ধে যেসব মানববন্ধন হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এমপি ফিজার কিছু ব্যক্তিকে দিয়ে এসব অভিযোগ করাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি যদি জমি দখল করি, তাহলে কেউ মামলা করে না কেন? আদালতে তো মামলা হতেই পারে।’

শিবলী সাদিক বলেন, বিষয়টি আমি দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছি; যেহেতু বিষয়টি আমার পরিবারকে নিয়ে। আমার বা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন।

তিনি বলেন, যে জমি দখলের কথা বলা হচ্ছে, তার দাম কত হতে পারে? আমার এলাকার জমির দর ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা বিঘা (৩৩ শতক)। এতে ওই পরিমাণ জমির মূল্য ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার মধ্যে। অথচ আমরা আফতাবগঞ্জ এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে এলাকার মানুষের জন্য একটি মসজিদ করছি, যার খরচ হয়েছে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। মানুষ যাতে ভালোভাবে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য এত টাকা ব্যয়ে মসজিদ নির্মাণ করছি; সেখানে কি আমরা মাত্র ১০-১৫ কোটি টাকার জমি দখল করব। শুধু এই মসজিদই নয়; আমাদের জমিতে হাটবাজার, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, কবরস্থান রয়েছে। এটি সুপরিকল্পিত একটি ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না।

 

শিবলী সাদিকের চাচা ও স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, কবরস্থান তাদের দখলেই আছে, তারাই মাটি দেয়। তাহলে আমাদের দখলে থাকল কীভাবে! জমি তাদের- এটা যদি প্রমাণ দিতে পারে, তাহলে সংবাদ সম্মেলন বা আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি নিজেই তাদের জমি ছেড়ে দেব। স্বপ্নপুরীতে মোট জমি ৫৬ একর। এর মধ্যে আমাদের দুই ভাইয়ের নামে রেকর্ড আছে ৩৫ একর জমি, তা ১৯৬০ সালে। ১০ একর জমি রয়েছে, যা বন বিভাগ নিজেদের বলছে, সেটিও আমাদের নামে আছে। বাকি যেসব জমি আছে, সেগুলো আমরা আদিবাসীদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছি। স্বপ্নপুরী তৈরি করেছি ৩৪ বছর আগে। এখন এসে তারা নিজেদের জমি বলে দাবি করছে।

এ ব্যাপারে জানতে দিনাজপুর-৫ আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাঁকে খুদে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি উত্তর দেননি।

 

তবে তাঁর বিরুদ্ধে শিবলী সাদিকের অভিযোগের ব্যাপারে গত ২৬ আগস্ট ফিজার বলেছিলেন, ‘শিবলী সাহেব যা বলেছেন, উনার দায়িত্বে বলেছেন। উনি সংসদ সদস্য, এটা বলা শোভন হয়েছে কিনা- সেটা উনার বিষয়। আমি মনে করি, আমার কোনো ষড়যন্ত্র করার দরকার হয় না। উনার সব কথার জবাব দেওয়ার দরকারও নেই। আর এটা আমাকে মানায়ও না।