সীমান্তে স্কুলছাত্র হত্যা: ৪২ ঘণ্টায়ও মরদেহ ফেরত দেয়নি বিএসএফ

 

দিনাজপুরের দাইনুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে স্কুলছাত্র মিনার বাবু হত্যার ৪২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি।

হত্যার ঘটনার ৪০ ঘণ্টা পর বিজিবির পক্ষ থেকে ডাকা হলে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সদরের ৯নং আস্করপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক, সংরক্ষিত নারী সদস্য রুমানা পারভীন, নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর আলম, নিহতের চাচাতো ভাই রুবেল হাসানসহ কয়েকজন বিজিবির খানপুর সীমান্ত ফাঁড়িতে যান। সেখানে তারা নিহতের ছবি, শরীরের চিহ্নসহ নানা তথ্য প্রদান করেন। সেসব বিএসএফর কাছে হস্তান্তর করবে বিজিবি। মেইলের মাধ্যমে বিএসএফকে সেগুলো দিয়ে সংবাদ পাঠানো হয়েছে বলে বিজিবি জানিয়েছে।

বিজিবি ফাঁড়ি থেকে বের হয়ে রুমানা পারভীন ও রুবেল হাসান জানান, বিজিবি ছবিসহ যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছে তা বিএসএফ-এর কাছে মেইল করে পাঠিয়েছে। এরপর বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে জানানো হবে কখন এবং কোথায় নিহতের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে নিহত হওয়ার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও মরদেহ ফিরে না পাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। ছেলের শোকে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন মা।

 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিনারের মায়ের আগে থেকেই অ্যাজমা রয়েছে। ছেলের শোকের কারণে অ্যাজমা বেড়ে গেছে। আর পাগলপ্রায় হয়ে পড়েছেন বাবাও। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও মরদেহ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী এবং স্বজনেরা।

নিহতের একমাত্র বোন জান্নাতুল পারভীন বলেন, আমার ভাইকে বিএসএফ হত্যা করেছে। আমরা মরদেহ চাই। আমরা ভালোভাবে কাফন-দাফন করতে পারি যেন। আমার ভাইকে হত্যার বিচার চাই।

 

নিহতের মা মিনারা পারভীন বলেন, আমার বুক খালি করা হয়েছে। এই গুলির অর্ডার কে দিয়েছে? এই বর্ডার দিয়ে কেন ভারতের মাল পার হয়? ওদের মাল কেন বাংলাদেশে আসে? এইজন্য এই বাচ্চাগুলো মারা যায়। কারও মায়ের বুক যেন খালি না হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আমার দাবি।

 

মিনারের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ছেলেটার মরদেহ ফেরত চাই। আমি মাটি দিবো।

 

নিহত মিনারের চাচাতো ভাই রুবেল হাসান বলেন, আমার ভাইকে বিএসএফ গুলি করে মেরেছে। এতক্ষণ হয়ে যাচ্ছে মরদেহ ফেরত দিচ্ছে না। আমরা মিনারের মরদেহ দ্রুত ফেরত চাই এবং এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। বিজিবিও আমাদেরকে তেমন সহযোগিতা করছে না। আর প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে যেদিন বললেন যে, সীমান্তে আর যেন হত্যা না হয় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, ওই রাতেই গুলি করা হলো। আমাদের জমি তো সীমান্তে, আমরা কেন সীমান্তে যেতে পারব না?

 

স্থানীয় লিমন বলেন, আমার ভাতিজার মরদেহ দেওয়া হোক। আমরা ধর্মীয় নিয়ম অনুসারে দাফন-কাফন করব। বিজিবির কাছে যাচ্ছি, কিন্তু মরদেহ দেওয়া হচ্ছে না।

 

ওই ইউপির সংরক্ষিত নারী সদস্য রুমানা পারভীন বলেন, আমরাও চেষ্টা করছি যাতে করে দ্রুত মরদেহ আমাদের নিকট হস্তান্তর করে।

 

খানপুর সীমান্ত ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. আনিস বলেন, এ ব্যাপারে অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলেন। আমি কিছু জানি না।

 

এ ব্যাপারে জানতে দিনাজপুর-২৯ বিজিবি’র অধিনায়ক (০১৭৬৯৬০২২..) ও দিনাজপুর সেক্টর কমান্ডারকে (০১৭৬৯৬০২২..) বারবার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি।

 

উল্লেখ্য, গত বুধবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে জেলার সদর উপজেলার দাইনুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে মিনহাজুল ইসলাম ওরফে মিনার বাবু (১৬) নামে এক বাংলাদেশি স্কুলছাত্র নিহত হয়। সে সদর উপজেলার ৯নং আস্করপুর ইউনিয়নের ভিতরপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। খানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করত। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরও একজন। এছাড়া অন্য একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।