সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ‘দলীয়করণ’ করে ভাগ করেছে: ফখরুল

ফাইল ছবি

সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ‘দলীয়করণ’ করে ভাগ করে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমি মাঝেমধ্যে বলি যে, এটা একটা নষ্ট সময়। সব কিছুকে এরা (সরকার) নষ্ট করে ফেলছে। মিথ্যাচার, ভ্রষ্টাচার, দুর্নীতি- এমন একটা জায়গা নেই যে, দেশটাকে বের করে আনার কোনো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, আপনি বিচারালয়ে যান, বিচার পাবেন না। আপনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর কাছে যাবেন নিরাপত্তার জন্য, সেখানে নিরাপত্তা পাবেন না। আগে বলবে, তুমি বিএনপি কর না আওয়ামী লীগ কর? যদি বিএনপি কর কোনো কিছু হবে না, উপরন্তু আপনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দেবে। ঢাকা দক্ষিণ ছাত্র দলের তিন জন ছেলে- তারা রাতে বাসায় যাচ্ছিল, ওই সময়ে তাদেরকে আক্রমণ করে আহত করা হয়েছে। মামলা দিতে গেছে, ওদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

‘ওরা ভাগ করে ফেলেছে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার গোটা জাতি গত ১২/১৫ বছরে বিভক্ত করে ফেলেছে। এমন একটা জায়গা পাবেন না যেখানে আপনি দেখবেন যে, বিভক্তি নেই। সবখানে এই আওয়ামী লীগ আর বাকি সব বিরোধী, এই একটা ভাগ করে ফেলেছে।

মসজিদের কমিটি- সেখানে ভাগ, স্কুলের কমিটি- সেখানেও ভাগ, মাদরাসার কমিটি সেখানেও ভাগ, গানের স্কুলে সেখানেও ভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়েও সেখানে ভাগ, কলেজেও ভাগ- সবখানে ভাগ। এই যে বিভক্তি কোনো জাতিকে কখনো সামনের দিকে নিয়ে যাবে না। জাতিকে সামনের দিয়ে নিয়ে যায় ঐক্যের মধ্য দিয়ে, যেটা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব করেছিলেন। ’৭৫ সালে এসে তিনি সেই বিভক্তি দূর করে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই গাজী মাজহারুল আনোয়ার জিয়াউর রহমান সাহেবের ভক্ত ছিলেন। অন্যদিকে, জিয়াউর রহমান সাহেবও তার ভক্ত ছিলেন।

‘রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে ফেলেছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনটাই কেমন যেন নষ্ট হয়ে গেছে। একদম কলুষিত হয়ে গেছে। কোথায় ভালো জিনিস আছে বলেন? আজকে এটা তো সত্য কথা যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামোটা- এটা ভেঙে পড়েছে, ভঙ্গুর।

তিনি বলেন, একটা নির্বাচনের মাধ্যমে যে একটা পার্লামেন্ট গঠন হবে, সরকার গঠন হবে, সেই নির্বাচনে জনগণই অংশ নিতে পারে না। তাহলে এটা কিসের নির্বাচন? ওই জায়গাটা তারা ধ্বংস করে ফেলেছে। তাহলে বুঝেন এই যে একটা অবস্থা, এই যে একটা পরিবেশ, এই যে একটা সমাজ, এই যে একটা রাষ্ট্র তারা তৈরি করছে, এখান থেকে মুক্তি হবে কী করে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন।

তিনি বলেন, এখান থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে। এটা কি একা বিএনপির দায়িত্ব? সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এটা যে নষ্ট হচ্ছে, এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে স্বপ্ন সেটা নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে যে পথ সেটা। এর জন্য দায়ী সম্পূর্ণ আজকের শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণে ‘ড. খন্দকার মোশাররফ ফাউন্ডেশনে’র উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর গাজী মাজহারুল আনোয়ার মারা যান।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে ‘বাতিঘর’ হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি আমাদের সামনে একটা নক্ষত্রের মতো ছিলেন, বাতিঘর। আমরা এই ধরনের মানুষ আর পাব না।

‘আমরা অনুপ্রাণিত হই তার গানের মধ্য দিয়ে, আমরা অনুপ্রাণিত হই তার চরিত্রের মধ্য দিয়ে, আমরা অনুপ্রাণিত হই তার কাজের মধ্য দিয়ে। আসুন গাজী ভাইয়ে আত্মার জন্য আমরা সবাই দোয়া করি এবং আল্লাহতালা যেন আমাদের সবাইকে গাজী ভাই হওয়ার মতো তৈরি করেন।’